আমার শিরায় জ্বলে আগুন,
রুদ্ধশ্বাসে পুড়তে চায়।
আমার চোখে ঝড়ো মিছিল,
শ্লোগানে বদ্ধ উপমায়।

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

বাংলাদেশে সেক্যুলারিজম


সেক্যুলারিজম কি?
সেক্যুলারিজম হচ্ছে এমন একটা মতবাদ বা নীতি যার দুটো দিক রয়েছে। এক দিক হচ্ছে, রাষ্ট্রকে যেকোনো ধরণের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর প্রভাবমুক্ত রাখা। অন্যটি হচ্ছে, সব ধর্মের ও মতের মানুষ আইনের কাছে সমান বলে বিবেচিত হবে। সহজ কথায়, ধর্মের নামে কারো বিরুদ্ধে কোনো বৈষম্য নয়।

 


আরেকটু ভেঙ্গে বললে...


-রাষ্ট্রের সাথে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কহীনতাই হচ্ছে সেক্যুলারিজমের মুল নীতি। সেক্যুলারিজম নিশ্চিত করে কোনো ধর্মভিত্তিক দল বা গোষ্ঠী কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের কোনো ব্যাপারে নাক গলাবে না।

-একটা সেক্যুলার দেশে সব নাগরিক আইনের কাছে সমান।

-সেক্যুলারিজম সব ধর্মের আস্তিক এবং নাস্তিক উভয়কেই রক্ষা করে।

-সেক্যুলারিজম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।

-সেক্যুলার দেশে আপনি যুক্তি দিয়ে যেকোনো ধর্মীয়,রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মতবাদের সমালোচনা করার অধিকার রাখেন।

-সেক্যুলারিজম এর সাথে নাস্তিকতা, অজ্ঞেয়বাদ বা ঈশ্বরসম্পর্কিত আধুনিক মতবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এধরনের মানুষ একটা সেক্যুলার দেশেই বাস করতে পছন্দ করে কারণ সেক্যুলার রাষ্ট্র সবার অধিকার নিয়েই সমান সচেতন থাকে।
  
বাঙলাদেশে সেক্যুলারিজম

বাঙলাদেশের জন্মই হয়েছে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক বিপ্লব থেকে। ১৯৪৭ এ বৃটিশরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশ ছেরে চলে যায় তখন তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে যায়। তখন পাকিস্তানের ছিলো দুইটা অংশ , পূর্ব পাকিস্তান(বর্তমান বাঙলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান। মজার ব্যাপার হচ্ছে পাকিস্তানের এই দুই অংশের মাঝে দূরত্ব ছিলো অন্তত ১২০০ কিলোমিটার। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালী সংস্কৃতির চর্চা থাকায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের হিঁদুয়ানি মুসলিম বলতো এবং সংস্কৃতি,অর্থনীতিসহ সকল দিকে পূর্ব পাকিস্তানীদের দাবিয়ে রেখেছিলো। এরপর ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের একটা সেক্যুলার মোডারেট দল সমগ্র পাকিস্তানে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা বাঙালীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চায় না। উলটো তারা ১৯৭১ সালে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা শুরু করে। এসময় জামাত-ই-ইসলামি ও মুসলিম লীগ সহ সকল ইসলামপন্থী দলগুলো পাকিস্তানিদের এই গণহত্যায় সাহায্য করে। তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানীরা প্রায় ৩২ লক্ষ বাঙালি হত্যা করে ,সাথে ধর্ষণ করে অন্তত ৪ লক্ষ বাঙালি নারিকে। এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছিলাম মুক্তির স্বাদ। একাত্তরে আমরা রক্ত দিয়েছিলাম সেক্যুলারিজম এর জন্য।

১৯৭২ এর অরিজিনাল সংবিধান অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু শেষদিকে সোশ্যালিস্ট বাঙলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বাকশাল(বাঙলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ) নামে একটা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে বাঙলাদেশ ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কিন্তু সেনাবিদ্রোহে তার মৃত্যু হয় ১৯৭৫ এর আগস্টে। এরপর জিয়ায়ুর রহমান সংবিধান থেকে সেক্যুলারিজম তুলে দেয় এবং সংযুক্ত করে "সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস"। আবার স্বৈরশাসক এরশাদ ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে। এসবের মাধ্যমেই বাঙলাদেশ ধর্মীয় সংঘাত ও সাম্প্রদায়িকতার দীর্ঘ রাস্তায় যাত্রা শুরু করেছিলো।

সংবিধান থেকে সেক্যুলারিজম তুলে দেয়া ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথেও ছিলো ব্যাপারটা সাংঘর্ষিক। ২০১০ সালে যদিও আদালত সেক্যুলারিজম সংবিধানে ফিরিয়ে এনেছে তথাপি বাঙলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম এখনো ইসলামই রয়ে গেছে। রাষ্ট্রধর্মসহীত একটা সেক্যুলার দেশ চিন্তা করা খুব একটা সহজ ব্যাপার না।

বাঙলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান

বাঙলাদেশের প্রথম ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান হয় জঙ্গি সংগঠন হুজির মাধ্যমে। আফগান যুদ্ধে একসময় এ দেশ থেকে অনেক মুজাহিদ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে আফগানিস্তান গমন করেছিলো। তারাই দেশে ফিরে ১৯৯২ সালে হুজি প্রতিষ্ঠা করে। তারা ওসামা বিন লাদেন ও সৌদি আরব কর্তৃক সরাসরি অর্থ পেত। বাঙলাদেশ ও ভারতে একাধিক হামলার পিছনে রয়েছে হুজি।

বিশ্ব প্রথম এদেশে উগ্র ইসলামপন্থীদের উপস্থিতি টের পায় যখন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে হত্যার জন্য ইসলামপন্থীরা ৫০০০ ডলার পুরস্কার ঘোষনা করে। এরপর ১৯৯৯ সালে উদীচীর একটা কনফারেন্সে ২ টা বোমা হামলা হয় এবং অন্তত ১০ জন নিহত হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মধ্যে উল্লেখ্য ২০০৫ সালে জে এম বির সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা। তারা এক ঘন্টার ও কম সময়ে সমগ্র বাঙলাদেশে ৬৩ জেলায় ৪৫০ এর ও অধিক বোমা বিস্ফোরিত করে। ২০১৪ সালে বেশ কয়েকটা জঙ্গি সংগঠন "জিহাদ কাউন্সিল" গঠন করে আসাম, বাঙলাদেশ ও রাখাইন অঞ্চল নিয়ে ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তারা মাদ্রাসা ছাত্র ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের থেকে যোদ্ধাও সংগ্রহ করছে।

ব্লগার হত্যা

ইসলামপন্থীদের বেঁধে দেয়া এক অদৃশ্য লাইন ক্রসের চেষ্টা যারাই করেছে তাদের জন্য বাঙলাদেশ দিন দিন বিপদজনক হয়ে উঠছে। গত ২ বছরে অন্তত ১১ জন মুক্তমনা, সেক্যুলারিস্ট ব্লগার, লেখক নিহত হয়েছে তাদের হাতে।

সেক্যুলার শাহবাগ আন্দোলন চলার সময়ে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজিব হায়দার মিরপুরে জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার অভিজিত রায় ও তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ জঙ্গিদের দ্বারা আক্রমণণের স্বীকার হন। প্রতিভাবান লেখক অভিজিৎ রায় নিহত ও বন্যা আহমেদ মারাত্মক আহত হন। ঐ বছরের মার্চেই ২ জিহাদির হাতে নিহত হয় ওয়াশিকুর বাবু। 'যুক্তি'র সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাস জিহাদিদের আক্রমণে নিহত হন ২০১৫ এর মে মাসে। ব্লগার নীলকে হত্যা করা হয় ২০১৫ এর আগস্ট মাসে। এরপর এরকম আরো অসংখ্য মৌলবাদী হামলার স্বীকার হয় বাঙলাদেশ যার সর্বশেষ হচ্ছে গুলশান এটাক।


                                         


এসব হামলার পরে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদউজ্জামান খান উল্টো ব্লগার ,লেখকদের দোষ দিয়ে বলেছেন ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করার অধিকার কারো নেই এবং নিহত ব্লগারদের লেখা তদন্তের কথাও জানান তিনি। নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবী করা একটা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আপনি এরকম ভয়ংকর বক্তব্য আশা করতে পারেন না। বাঙলাদেশ মুক্তমনা লেখক,ব্লগারদের জন্য দিন দিন বিপদজনক হয়ে উঠছে। হামলা গুলোর প্যাটার্ন প্রায় একইরকম। তবে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হচ্ছে হামলার পরে সরকারের এরকম নিকৃষ্ট বক্তব্য। যার ফলে গত কয়েক বছরে বাঙলাদেশে একের পর এক প্রগতিশীলদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।

আমাদের করণীয়

এদেশের সরকার সবসময়েই মৌলবাদীদের সাথে আপোষ করেছে। বাঙলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগ সহ সব প্রধান রাজনৈতিক দল ই দায়ী। বর্তমান সরকার শাহবাগে হামলা করে বলেছে ব্লগারেরা জাতিকে বিভক্ত করছে। পাশাপাশি তারা হেফাজাতকে ডোনেট করছে, তাদের সকল অন্যায় দাবী মেনে নিচ্ছে। কে এই হেফাজাত এ ইসলাম! একটা উগ্র ধর্মান্ধ দল যারা কিনা পুরো পৃথিবীর কাছে বাঙলাদেশকে একটি মধ্যযযুগীয় ধর্মান্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিতে চায়।

তাই আমাদেরকে এখুনি রুখে দাঁড়াতে হবে লাখ শহীদের রক্তের মুূল্য দিতে। মুক্তমনা লেখকেরা কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না, তারা শুধু একটা সুন্দর বাঙলাদেশ গড়তে চায়। আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে হিন্দু মুসলিম পাশাপাশি অবস্থানের জন্য। আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বাস যার যার, বাঙলাদেশ সবার।



সরকারের এখন দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যেসব ব্যাপারে সুপারিশ করতে চাই তা হল..

১/ দেশে জঙ্গি নেই সরকারের এরকম বক্তব্য দেয়া বন্ধ করতে হবে। সমস্যাটা মেনে নিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন। নিজে নিজে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবো এরকমটা ভাবা বোকামি ছাড়া কিছুই না।

২/মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে সেক্যুলার সাব্জেক্টগুলো পড়াতে হবে। তারা যেনো সব ধর্মের, মতের মানুষের ব্যাপারে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে বড় হতে পারে সে সুযোগ করে দিতে হবে।

৩/মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য যথেষ্ট চাকরি ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে।

৪/ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনের পরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো। সেখানে নিয়ে যেতে হবে দেশকে।


সর্বশেষে বলতে চাই, এখন বাঙলাদেশের ভবিষ্যৎ বেছে নেয়ার সময়। আমরা কি পাকিস্তানের মত একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র চাই নাকি প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙলাদেশ চাই। সময় চলে যাচ্ছে , আপনাকে আমাকে সবাইকে এখুনি আওয়াজ তুলতে হবে।



                                                                            আমার মাটি, আমার মা
                                                                               পাকিস্তান হবে না।
                                                                                    জয় বাঙলা।





মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্টদের উপরে চালানো ভয়ংকরতম গণহত্যা


১৯৬৫ সাল,ইন্দোনেশিয়া। 
১ অক্টোবর একদম সকালে সামরিক বাহিনীর জুনিয়র কিছু অফিসার ছয়জন জেনারেলকে হত্যা করে এবং রাজধানী জাকার্তার নিয়ন্ত্রণ নেয়। মেজর জেনারেল সুহার্তো তখন সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করেওইদিনই  জেনারেল সুহার্তোর পরিচালনাধীন সেনাবাহিনী বিদ্রোহী অফিসারদের নির্মূল করে ফেলে। কিন্তু একই সাথে তিনি এই সেনা অভ্যুত্থানকে কমিউনিস্টদের চক্রান্ত বলে দায় কমিউনিস্টদের উপরে চাপিয়ে দেয়।


জেনারেল সুহার্তো

এরপর যা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সহজ নয়। লিস্ট করে কমিউনিস্ট হত্যা করা শুরু হয়। এই লিস্ট ইন্দোনেশিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে দিয়েছিল মূলত সি আই এ। সি আই এ ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিতে তাদের অসংখ্য এজেন্ট আগেই ঢুকিয়ে রেখেছিলো। এতে করে লিস্ট তৈরি করতে তাদের খুব বেগ পেতে হয় নি। এরপর কৃত্রিম সেনা অভ্যুত্থানের দায় চাপিয়ে দিয়ে শুরু হয় সেই লিস্ট ধরে ধরে কমিউনিস্ট হত্যা ।

 এই হত্যাকাণ্ডে আরো অংশ নিয়েছিলো কমিউনিস্ট বিরোধী মুসলিমরা। সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের ও তারা ছেরে দেয় নি। ধর্মের কথা বলে সাথে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে তাদেরকে সহজেই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত করা গিয়েছিলো। যদিও কমিউনিস্ট বিরোধী সেসব প্রোপাাগান্ডা সেনাবাহিনী কখনই প্রমাণ করতে পারে নি।

ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্টরা ছিলো চীন ও সোভিয়েত বলয়ের বাইরে সবচেয়ে শক্তিশালী কমিউনিস্ট দল। তাই সাম্রাজ্যবাদীরা বুঝে গিয়েছিল সুকর্ণ ( ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ) এর পতনের পরে শক্তিশালী কমিউনিস্টরাই ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষমতায় আসবে। এর আগেও সুকর্ণ কমিউনিস্টদের সাথে একরকম ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই রেখেছিল। তাই তারা কমিউনিস্টদের ইন্দোনেশিয়া থেকে একদম মুছে ফেলতে চেয়েছিলো।

ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিস্টদের হত্যার জন্যে আমেরিকা সুহার্তোর সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছিল। এটা ছিলো ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যা। কমপক্ষে ১০ লক্ষ কমিউনিস্ট হত্যা করা হয়েছিল তখন। এই বৃহৎ গণহত্যা চালাতে গিয়ে সেনাবাহিনী খাদ্য ও গোলাবারুদ সংকটের মুখোমুখি হয়। আমেরিকা তাদেরকে এসব দিকে সর্বোচ্চ সাপ্লাই দিয়ে গণহত্যা অব্যাহত রাখে। সেনাবাহিনী যদি তখন এই সাপ্লাই না পেত তাহলেও তারা টিকতে পারতো না।


গণহত্যা এত প্রকট রূপ ধারণ করেছিল যে ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সর্বত্র লাশের গন্ধ পাওয়া যেত। মাছেরা লাশ খাচ্ছে এই জন্য দীর্ঘদিন মানুষ মাছ খাওয়া বর্জন করেছিল। এই দশ লক্ষ কমিউনিস্ট হত্যার মাধ্যমে আমেরিকা এশিয়ায় তার চূড়ান্ত প্রভাব দেখালো। গণহত্যায় আমেরিকা যদি সম্পৃক্ত না থাকতো তাহলে বিশ্ববাসীকে এখন ভিন্ন এক এশিয়া দেখতে হতো।




আজকে সেই ইন্দোনেশিয়ার কি অবস্থা! ১৯৬৫ তে জেনারেল সুহার্তো আমেরিকার সহায়তায় ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবসময় আমেরিকার সহায়তা পেয়ে গেছে। দেশটাকে একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো আইনের ঊর্ধ্বে। ১৯৯৮ তে সেনাবাহিনীর পতন ঘটার পরেও তারা এখনো বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছে। সুহার্তোর কারনে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার অধিগ্রহণ ও হস্তক্ষেপের ফলে প্রায় এক লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটে। এখনো তাদের বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় না। সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাদের সমর্থন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ও পড়ানো হয় ১৯৬৫ এর সেই গণহত্যা ছিলো বীরত্বপূর্ণ কাজ।


সুহার্তোকে বলা হয় আধুনিক সময়ের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ও হিংস্র রাষ্ট্রনেতা। তার সমাজতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড দেশকে একসময় স্থবরতার দিকে নিয়ে যায়। এখনো সেখানে বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তবে, এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫০ বছর পরে এই রোমহর্ষক গণহত্যার বিচার দাবী করেছে। যতদূর জানা যায় নানা প্রতিকূলতার পরেও এখন এই গণহত্যার বিচারে সমান্য অগ্রগতি হয়েছে । 

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

আবার [ সায়েন্স ফিকশন ]


    


মহাকাশযানের বিশাল মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে রাফা।সে এই মাত্র যে মহাকাশযানটি ধ্বংস করেছে সেটি তাদের মার্স ফাইটারদেরই, যদিও তার উদ্দেশ্য ছিলো একটা শত্রু মহাকাশযান। এমনিতেই মঙ্গলের বিদ্রোহীদের মধ্যে মহাকাশযান ও প্রশিক্ষিত যোদ্ধার অভাব বিদ্যমান। এরকম সামান্য কিছু স্কাউটশিপ, যুদ্ধযান নিয়েই তারা পৃথিবীর মানুষদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে এসেছে।তারমধ্যে এরকম আত্মঘাতী আক্রমনের জন্য তার কি শাস্তি হতে পারে তা রাফা অনুমান করতে পারছে।কিন্তু এই মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যাওয়া যুদ্ধযানটির যোদ্ধাদের জন্য শোকে তার সব অনুভুতিগুলো অবশ হয়ে যাচ্ছে। একসাথে যাদের সাথে যুদ্ধ শিখেছে, ছোটো থেকে একসাথে যাদের সাথে মঙ্গলের সীমিত সম্পদ ভাগাভাগি করে ভোগ করেছে তাদের কাউকে হত্যা করার মনকষ্ট তার সমগ্র চেতনা গ্রাস করে ফেললো।
অনেকদিন আগের কথা।পৃথিবীতে পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি স্বরূপ মঙ্গলগ্রহে নির্বাসন দেয়া হয়।তাদের জন্য সামান্য সম্পদ দেয়া হয়েছিলো। মঙ্গলকে তখনো মানুষের বসবাসের পুরোপুরি উপযোগী করে তোলা হয় নি।সেইসব মানুষেরা তখন মঙ্গলের বনভূমির পরিমান বাড়ালো, প্রযুক্তির উন্নয়ন করলো। এরপর অনেকগুলো প্রজন্ম পেরিয়ে ২৫ শতকের শেষে এসে তাদের সভ্যতা বেশ উন্নত হয়ে উঠলো।কিন্তু পৃথিবীর মানুষেরা তাদেরকে কখনো ভালো থাকতে দেয় নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা মঙ্গলের সীমিত সম্পদ জোর করে নিজেদের করে নিচ্ছিলো।তার প্রতিবাদ করতেই আজ তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সব দেশ এখন একটা দেশে পরিনত হয়েছে।তাদের সবার এখন একটাই আতংক এই মার্চ ফাইটার রা।এখন তারা শুধু নিজেদেরকে পৃথিবীবাসির শোষণ থেকেই রক্ষা করে না মাঝে মধ্যে পৃথিবীতেও আক্রমন করে।তাদের সাহস আর শৃঙ্খলা তাদেরকে ভয়ংকর করে তুলেছে।
মনিটর থেকে চোখ নামালো রাফা।শত্রু মহাকাশযান গুলো পৃথিবীতে ফিরে গেছে।মহাকাশযানের অভাবে তারা ওদের পিছনে ধাওয়া করতে পারে নি।কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে ছোটো হলরুমের মধ্যে এসে দাড়ালো সে।মঙ্গলীয় যোদ্ধাদের রবোট ছিলো তাদের জন্য অপ্রতুল আর রাফা খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলো বলে সে তাকে সহায়তার জন্য কোনো রবোট বা সহকারী নেয় নি। তাদের যোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে তাদের নেতা হেটফিল্ডের পরেই রাফা সবচেয়ে ভয়ংকর মঙ্গল সেনা। কিন্তু আজকের ঘটনার পরে তাকে কি শাস্তি দেয়া হবে সে বুঝতে পারছে না।
তীক্ষ্ণ সাইরেনের মত করে এলার্ম বাজছে। রাফা সম্বিত ফিরে পেয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো।নিকটস্থ ফোবস মহাকাশকেন্দ্র থেকে তাদের নেতা হেটফিল্ড তার সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করছে।রাফা যোগাযোগ স্থাপন করতেই সামনে হেটফিল্ডের হলোগ্রাফিক ছবি ভেসে উঠলো....
- ক্যামন আছো রাফা?
- ভালো নেই,দোষটা আমারই ছিলো
- হা হা। ভয় পাচ্ছো নাকি অনুশোচনাবোধ?
- ভয় যে করছে না তা না। কিন্তু নিজের কাজের জন্য খারাপ লাগছে।
- শুধুই খারাপ লাগছে! তুমি জানো তুমি কি করেছো? সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার মত অপরাধ করেছো।
- আমি মঙ্গলের আইনকে শ্রদ্ধা করি। আমার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত।
- তুমি আমাদের সবচেয়ে বিচক্ষণ যোদ্ধাদের একজন।তোমার কাছ থেকে এরকম কিছু আশা করি নি।
- ( মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে তুললো রাফা)
-আমাদের অনেক সাফল্যে তোমার অবদান আছে। কিন্তু এটা তোমাকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না। আমাদের আইন - শৃঙ্খলা, নিয়ম কানুন পৃথিবীর মত সহজ নয়।
- (আবার ও ছোটো করে হাসি ফুটিয়ে তোলে রাফা)
- আমাদের প্রচলিত মৃত্যুদণ্ড খুব কষ্টেরসাথে দেয়া হয় জানো নিশ্চয়। কিন্তু তোমাকে একটা ছার দেয়া যাক। বেছে নাও কিভাবে মারা যেতে চাও!
- মাথায় গুলি করে মারার মত আদিম পদ্ধতি ই আমার পছন্দ।
- ঠিকাছে।তোমাকে আর ১২ ঘন্টা সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে দেখতে পারো। যদিও সেটা অসম্ভব। হা হা..
-আমি সেটা জানি।আমি কখনো এমন ভুল করবো না হেটফিল্ড।
- বিদায় ....
সামনে থেকে হেটফিল্ডের হলোগ্রাফিক ছবিটি চলে গিয়ে দেয়ালটা দৃশ্যমান হলো। রাফা জানে এখন তার মৃত্যু আটকানোর সাধ্য কারো নেই।সে পৃথিবীতে যেতে পারবে না। মহাকাশেও বেচে থাকতে পারবে না। তখন তার মৃত্যু হবে আরো ভয়ংকর। রাফা মৃত্যু নিয়ে ভয় পাচ্ছে না। তাদের মত যোদ্ধাদের সেই ভয় থাকতেও হয় না।কিন্তু সে ত্রিসাকে নিয়ে ভাবছে। সে যখন থাকবে না তখন ত্রিসা কিভাবে একা থাকবে!
=======================
ত্রিসা তার জেটটি মহাকাশযানের ডেকে রেখে ভিতরে প্রবেশ করলো। কন্ট্রোলরুমে রাফা তার জন্য অপেক্ষা করছে।
- ক্যামন আছো ত্রিসা?
- ভালো নেই। লাইয়ুন তার যুদ্ধযানসহ ধ্বংস হয়ে গেছে।জানো নিশ্চয়!
- হু। আমিই করেছিলাম ওটা...
- কি! তুমি করেছিলে!! কিভাবে? তুমি সত্যিই এটা করেছো রাফা?
- দুর্ঘটনা বশত হয়েছে। আমার কিছুই করার ছিলো না।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ত্রিসা। তার চোখে পানি ছলছল করতে থাকে। "তুমি জানো তোমার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এখন! "
ত্রিসার দিকে তাকিয়ে রাফা উত্তর দিলো" হ্যা জানি। এবং সেটা আর ১০ ঘন্টার মধ্যেই দেয়া হবে। তোমার সাথে আমার এটাই শেষ দেখা"
ত্রিসা বসে পরলো কন্ট্রোল প্যানেলের উপরে "কি বলছো তুমি! "
"যা বলছি সব সত্যি।কিভাবে বলা উচিত ছিলো আমি জানি না।হেটফিল্ড আমার সাথে যোগাযোগ করে আমাকে আমার শাস্তি জানিয়েছে।ইতিমধ্যে হয়ত কাউকে আমাকে হত্যার জন্য পাঠিয়েও দিয়েছে।"
একটা ঠান্ডা ক্রুসনার মিনিমিসাইল এসে যেনো বিধলো ত্রিসার বুকে। "রাফা আমি তোমাকে ছারা কিভাবে থাকবো!"
"জানি না আমি।কিন্তু তোমার আর কিছু করার নেই"অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দিলো রাফা।
"না আছে।তুমি আমাকে লক করে দাও।তোমার সাথে আমিও মরে যাবো।প্লিজ...." কাঁদতে কাঁদতে অনুরোধ করলো ত্রিসা।
"উহু, মোটেও এমন কিছু আমি করবো না। আমাকে ভুলতে না পারলে তুমি মঙ্গলে ফিরে আমার স্মৃতিগুলো নষ্ট করে দিও।"
রাফার ঘারে হাত রেখে ত্রিসা বললো, আমি এটা করবো না। তুমি না চাইলেও আমি লক করে নিচ্ছি। তুমি নিশ্চয় চাইবেনা আমি অনেক কষ্ট নিয়ে বেচে থাকি!
"তাই বলেছিলাম মঙ্গলে ফিরে আমার স্মৃতিগুলো মুছে ফেলো তোমার মস্তিষ্ক থেকে।আমার শেষ ইচ্ছে টুকু সত্যি করবে না তুমি? আমি তোমাকে আমার সাথে মরতে দিতে পারি না" কাঁপা গলায় বললো রাফা।
রাফার অনুরোধে হার মানে ত্রিসা...
"ঠিকাছে আমি মঙ্গলে ফিরে যাবো। কিন্তু তোমার স্মৃতি নিয়েই বেচে থাকবো। যত কষ্টই হোক আমি তোমাকে ভুলতে চাই না। হেটফিল্ডের দন্ডাদেষ আটকানোর কোনো রাস্তা নেই। থাকলে আমি জীবন দিয়ে হলেও সেটা করতাম।" বলে রাফাকে জরিয়ে ধরলো ত্রিসা।
"আমি জানি ত্রিসা। কিন্তু তোমার এখন এখানে থাকা ঠিক হবে না। তুমি তোমার মহাকাশযানে ফিরে যাও। তাছারা তুমি নিশ্চয় তোমার সামনে আমাকে মরতে দেখতে চাও না! "
ত্রিসা কোনো কথা না বলে উঠে দাড়ালো। রাফার গালে আলতো করে হাত ছুঁয়ে ডেকের দিকে আগাতে লাগলো।
"ত্রিশা" পিছন থেকে ডাকলো রাফা। ত্রিশা ঘুরে দাড়ালো। তার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।
নিজেকে সামলে নিতে নিতে রাফা বললো "আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ত্রিসা, ভালো থেকো তুমি ।বিদায়........"
দ্রুত ঘুরে ডেকে চলে এলো ত্রিসা। রাফার সামনে দাড়িয়ে থাকতে পারছিলো না সে। যাকে সেই ছোটোবেলা থেকে ভালোবেসে এসেছে তার মৃত্যু ত্রিসা কিভাবে সৈহ্য করবে সে জানে না।
====================
রাফা তার কক্ষে শুয়ে আছে। ত্রিসাকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিলো। এলিয়েঞ্জ লেকের কাছে তারা বাসা বাঁধবে।লেকের কৃত্রিম স্বচ্ছ পানিতে সাঁতরাবে। দূরের পাহাড়ে বেরাতে যাবে।কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে দুজন গল্প করবে।কিন্তু সব কিছুর শেষ হতে চলেছে। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে জড় বস্তুতে পরিনত হতে যাচ্ছে। তার সাথে সাথে কি তার স্বপ্নগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে! না যাবে না। রাফা জানে ত্রিসা সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে। ভাবতে ভাবতে তার চোখ ছলছল করে ওঠে।কখনো সে কাঁদেনি, আজ ও কাঁদবে না। কিন্তু তার চোখদুটো যেনো কোনো বাধা মানছে না...
রাফা তার শেষ সময়ে ত্রিসার উদ্দেশ্যে কিছু শেষ কথা লিখলো। নিজের মৃত্যুটাকে খুব সাধারণ করতে চাচ্ছে রাফা।তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনেক আবেগময় একটা নোট সেন্ড করলো ত্রিসার কাছে। এরপর ত্রিসার কি হবে রাফা জানে না। সে তার যুদ্ধযান থেকে সব রকম যোগাযোগব্যাবস্থা বন্ধ করে দিলো।আর কখনো কারো সাথে তার যোগাযোগ হবে না।
রাফা চেয়েছিলো পৃথিবীবাসির সাথে যুদ্ধ না করে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ব্যাপারটা শেষ করতে। পৃথিবীবাসিও হয়ত এখন সেটা মেনে নিতো কিন্তু হেটফিল্ড সেটা কখনো হতে দেয় নি। তারপর অনেক যুদ্ধ হয়েছে অনেক প্রান নষ্ট হয়েছে। এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়।রাফা মঙ্গলকে রক্ষার জন্য তার সব উৎসর্গ করতে পারে। এইসব ফাইটারদের সে অনেক ভালোবেসেছিলো। এখন মৃত্যুর আগে তাদেরকে ছেরে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু কিছুই করার নেই।
একটা জেট এসে থামলো। ডেক থেকে মহাকাশযানে প্রবেশের গেট রাফা খুলে দিলো। জেট থেকে ক্রাউস আর লুভেন নেমে এলো। এরা হেডফিল্ড এর বিশ্বস্ত, রাফা এদেরকে চেনে। রাফা হাতের ঘড়িতে দেখলো আর মাত্র দুইশ পঞ্চাশ সেকেন্ড বাকি আছে তার মৃত্যুর। রাফা হলরুমে বসে আছে। সে প্রস্তুত, অনুভুতিগুলো সব অকেজো হয়ে গেছে যেনো।
ক্রাউস আর লুভেন দ্রুত হলরুমে প্রবেশ করে রাফার সামনে দাড়ালো। "আমরা কখনো ভাবি নি এটা হবে " কাপা গলায় বললো ক্রাউস।
ক্রাউসের ঘারে হাত রাখতে রাখতে রাফা বললো"কেউ ই ভাবে নি।কিন্তু আমাদের মেনে নিতে হবে এটা। তোমরা যে জন্যে এসেছো সেটা করো। "
"তুমি গত কিছু ঘন্টাধরে যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছো। আমরা অনেক চেস্টা করেছি তোমার সাথে যোগাযোগের। না পেরে শেষে এখন তোমার কাছে আসলাম" ভরসাহীন কন্ঠে লুভেন বললো।
রাফা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো"কি হয়েছে লুভেন? "
"পৃথিবী থেকে আসা যুদ্ধযানগুলো আমাদের রাডার ফাকি দিয়ে ফোবস মহাকাশকেন্দ্রে আক্রমন করেছে।"
বিস্ময়ের ধাক্কাটা সামলে নিলো রাফা "মানে! কখন? "
" কিছুক্ষন আগেই। আমরা ভেবেছিলাম ওরা পৃথিবীতে চলে গেছে। তাই কোনো প্রস্তুতিও ছিলো না ওদের থামানোর।"
"হেটফিল্ড! সে কিছু করতে পারেজ নি? "
"ওই মহাকাশকেন্দ্রের কেউ ই বেচে নেই। হেটফিল্ড ও না। আমরা এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। তাই তোমার কাছে এসেছি। "
"আমার কাছে ক্যানো? " অবাক হলো রাফা।
"তুমি ছারা এখন আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার আর কেউ নেই।এখন থেকে তুমিই আমাদের নেতা। মঙ্গলের সবাইই এটা মানবে।"
পিছন থেকে ত্রাউস এসে বললো "আমরা এখন কি করবো নেতা? "
রাফা একটু সময় নিলো" কিছু না। সবাই মঙ্গলে ফিরে যাবো এখন। সেখানে গিয়ে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করবো আমরা।যুদ্ধ আমি থামাবো"
ক্রাউস আর লুভেন এর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।তারা পুরো মঙ্গলে খবর পাঠিয়ে দেয় রাফা তাদের নেতা হতে রাজি হয়েছে।পুরো মঙ্গলে নেমে আশা শোক এই খবরে কাটতে শুরু করেছে।রাফা হঠাৎ করে আবিষ্কার করলো তার মধ্যেকার ভয়টা এখনো কাটেনি। কাটবেই বা কি কিভাবে! সামনে যে তার অনেক বড় কাজ বাকি রয়ে গেছে।
ক্রাউস আর লুভেন চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আরেকটি জেট এসে থামলো।ত্রিসা নেমে এলো ভেতর থেকে।
কন্ট্রোলরুম...
"মহামান্য রাফা! কি করছেন আপনি?" হাসি আটকাতে আটকাতে বললো ত্রিসা।
"ত্রিসা! মহামান্য বলছো ক্যানো! " অভিমানের সুরে অভিযোগ করে রাফা।
"আমাদের নতুন নেতাকে মহামান্য বলবো না! " রাফার উপরে ঝাঁপিয়ে পরতে পরতে বললো ত্রিসা।
"ওই। ছাড়ো.... আগে মঙ্গলে ফিরে নেই তারপর" ঠোট বাকিয়ে হাসি ফুটিয়ে বললো রাফা।
"আচ্ছা। কিন্তু একটুখানি তো....... .................. " লজ্জায় বলতে পারলো না ত্রিসা। 3:)

বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

মুক্তমনা হত্যা ও তার ফলাফল


মুক্তমনাদের ১০০% ই শিক্ষিত এবং জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করেই তারা মুক্তমনা হয়েছে। একজন মুক্তমনা হওয়া খুব সহজ না। প্রচুর বই পড়ে, জ্ঞানের পিছনে ছুটে সত্যটাকে যারা খুঁজে বের করতে পারে তারাই মুক্তমনা হতে পেরেছে, এ জন্য দরকার অনেক বছরের সাধনা। কাউকে যেমন হঠাৎ করেই মুক্তমনা বানানো যায় না তেমনি কোনো মুক্তমনাকে কখনই কুসংস্কার, মিথ্যা দ্বারা প্রভাবিত করা যায় না। একেকজন মুক্তমনা দেশের একেকটা রত্ন, সম্পদ। এদেরকে রক্ষা করা, নিরাপত্তা দেয়া সরকারের ই দায়িত্ব।
অন্য দিকে ধর্মান্ধরা কুপের মধ্যে জন্মে কুপেই মারা যায়। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় না, তারা আলোর পথে হাটতে চায় না, কুপের অন্ধকারকেই তারা শ্রেয় মনে করে। কেউ তাদেরকে আলোর পথ দেখালেও তারা ক্ষিপ্ত হয়, রক্তপাতের মাধ্যমে অন্ধকারকে আরো গভীর করে। আলো হাতে যখন একেকজন মুক্তমনা দেশের মানুষকে এই অন্ধকার থেকে বের করতে এগিয়ে আসে, জ্ঞান চর্চাক্ষেত্রে পরিনত করতে চায় সমগ্র দেশকে তখন এসব আধারের প্রানীরা তাঁদের রক্তের জন্য পাগল হয়ে যায়। জিহাদের নামে মুক্তবুদ্ধিকে তারা ধূলিসাৎ করতে চায়।
কিন্তু তারা যেটা জানে না সেটা হলো তলোয়ারের শক্তি কখনই কলমের চেয়ে বেশি ছিলো না। ইতিহাস থেকে বুঝা যায় এসব ধর্মান্ধদের বারবার দুর্গন্ধময় ডাস্টবিনে ছুরে ফেলা হয়েছে। এখন হয়ত তারা সাময়িক ভাবে কিছু মুক্তমনা হত্যা করে আনন্দিত হচ্ছে কিন্তু এটাই তাদের ধ্বংস ডেকে আনছে তা তারা বুঝতেও পারছে না। পাকিস্তানেও এরকম একজন দুজন মুক্তমনা, নাস্তিক, মানবাধিকার কর্মী হত্যা থেকে শুরু হয়েছিলো। আজকে সেই পাকিস্তানে হাজার হাজার মানুষ মারা হচ্ছে ধর্মের নামে।




পাকিস্তানে যেসব অন্ধরা মুক্তমনা, নাস্তিক কিংবা বিজ্ঞানলেখকদের হত্যা দেখে প্রতিবাদ করে নি, উল্টো মনে মনে খুশি হয়েছিলো তারাই আজকে পাখির মত মরছে। বাঙলাদেশে আজকে একজন দুজন করে মুক্তমনা হত্যা হচ্ছে অথচ কেউ প্রতিবাদ করছে না, সরকার চুপ করে বসে আছে, সবাই যেনো মুক্তমনা হত্যায় সমর্থন দিচ্ছে ; এই তারাই এক সময় রাস্তায় পরে মরে থাকবে।
মুক্তমনাদের হত্যা করে জাতিকে জ্ঞানশূন্য করা হচ্ছে। আর জ্ঞানশূন্য জাতি কখনই ভালো থাকতে পারে না। এর প্রমান পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, মিশর, লিবিয়া, মরোক্কো, ইয়েমেন, সুদানের মত দেশের দিকে তাকালে বুঝা যায়। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ তাদেরকে কোথায় নিয়ে গেছে সেটা আজ ও বাঙালি উপলব্ধি করতে পারছে না। অন্যদিকে মুক্তচিন্তার চর্চা করে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আজ পৃথিবী শাসন করছে। আমরা কি দেখেও বুঝি না কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো?

ভারত কি আমাদের বন্ধু!নাকি আমরা ভারতের দাস হয়ে আছি!!


একাত্তরে ভারতের সহযোগীতায় পাকিস্তানিদের দেশছাড়া করে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধ শেষে সকল অস্ত্র, মুদ্রা ভারত তার দেশে নিয়ে গেলো। বরিশালের বীর সন্তান মেজর জলিল এর প্রতিবাদ করেছিলেন বলে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি কোনো পদক ও পান নি। বাঙলাদেশের উপর ভারত বাঙলাদেশ স্বাধীন হওয়া থেকেই প্রভাব বিস্তার শুরু করলো।
বৃটিশরা দেশভাগ করে চলে গিয়েছে ১৯৪৭ এ।বাঙলা অনেক আগেই ভাগ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক, খনিজ সম্পদে ভরপুর এলাকাগুলো পাশ থেকে সরিয়ে একটা দেশকে দেয়া হয়েছিলো। আমাদের দেশের পূর্বপাশের জেলাগুলোর দিকে তাকালেই দেখতে পাই দেশের সব খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদ সব এ এলাকাতেই অবস্থিত। এর আরো পূর্বে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ( নাগাল্যান্ড, মনিপুর, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা,অরুনাচল) কি পরিমান সম্পদ আছে সেটা চিন্তাও করা যায় না যদিও ভৌগলিকভাবে সেটা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন। এ অঞ্চলটার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করতে হয়েছিলো একটা সময়ে। আমি এখন যেটা বলছি সেটা ছিলো শুরু কিন্তু তখন বাঙলাদেশ ছিলো না।
স্বাধীনতার পরের ঘটনাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ। আন্তর্জাতিক একটা নদীতে ভারত কোনো কিছুর তোয়াক্বা না করে একটা বাঁধ বানালো। দেশের একটা অংশের কৃষি পুরপুরি বিপর্যস্ত হয়ে গেলো। আমরা আমাদের পানি পাই না, জমি সেচ দিতে পারি না উৎপাদন হবে কিভাবে! প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কৃষি ক্ষতি হতে থাকলো। আমাদের কথা তারা তখন ও শুনে নি, এরপর ও শুনে নি।
এরপরে দেখা যায় দহগ্রাম-আঙ্গুরপোতা ছিটমহল সমস্যা। বাঙলাদেশের এই অংশে যাওয়ার জন্য একটাই রাস্তা যা ভারতের মধ্যে। বাঙলাদেশের সাথে ১৯৭৪ সালে ভারতের এই চুক্তি হয়েছিলো যে ভারত বাঙলাদেশকে ঐ তিনবিঘা করিডোর খুলে দিবে বিনিময়ে বাঙলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ী ছিটমহল দিয়ে দিবে। এ জন্য বাঙলাদেশ ১৯৭৪ সালেই সংবিধানের ৩য় সংশোধনীতেই বেরুবাড়ী হস্তান্তরের বিধান উল্লেখ করে। কিন্তু ভারত কি আমাদের সেই তিনবিঘা করিডোর দিয়েছিলো? হা দিয়েছিলো তবে দিনে ১ ঘন্টার জন্য শুধু খুলে দিতো। বাকি সময় বন্ধ থাকতো..। ১৯৯২ এর ২৬ জুন এই চুক্তির কিছুটা বাস্তবায়িত হলেও পুরোপুরি আমরা পাই নাই এটা। পরবর্তীতে সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকতো। শেষমেশ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত তিনবিঘা করিডোর পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেয়।ভারত বড় ভাই তো! তাই একটু ঠেলাঠেলি করতে হয়েছে আরকি!!
বাঙলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার হারিয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় একটা দ্বীপ জেগে উঠলো। ভারত দাবি করে এটা তার, বাঙলাদেশ বলে এই দ্বীপ আমার। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার গেলো, রায় বাঙলাদেশের পক্ষে। কিন্তু ভারত ছারবে না, বাঙলাদেশকে দিবে না। শেষে সেই দ্বীপ আবার তলিয়ে গেলো, আর কিছু করতে না পেরে ভারত ক্ষান্ত দিলো।
আসি তিস্তা প্রসঙ্গে। তিস্তায় ৭০০০-৮০০০ কিউসেক পানির স্বাভাবিক প্রবাহ হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন এর জন্য তিস্তায় বাধ দিলো ভারত। এখন বাঙলাদেশে পানি আসে ৩০০-৪০০ কিউসেক, মানে মরুভূমি। যখন বর্ষা কাল তখন ভারত পানি ছেরে দেয় আর আমরা ভাসি, যখন খরা তখন পানি আটকায় আমরা পানি না পেয়ে মরি।মঙ্গা কি তা বাঙলাদেশের কৃষকরা জানতো না! ভারত সেটা ভালো করে শিখিয়ে দিয়েছে। বড় ভাই শিখাবে না তো কে শিখাবে? হুম!!
এরপরে আমরা পানি চাইলাম বারবার। ভারত পানি দিলো না।পশ্চিমবঙ্গের মমতা তাদের কৃষকদের প্রতি মমতা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক নদীতে ইচ্ছেমত পানির পরিমান নিয়ন্ত্রন করতেই পছন্দ করবেন। শেষমেশ যখন ইলিশে টান পড়লো তখন আসলো বাঙলাদেশের কাছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দিলে "পানি আসলে ইলিশ ও যাবে "। আর কি করার! এখন এভাবে গুতাচ্ছে যে ট্রানজিট দাও তাইলে পানি দিবো। আরে অধিকার আর আবদার কি এক জিনিস নাকি!! আমাদের কাছে ভারত ট্রানজিট আবদার করতে পারে কিন্তু তিস্তার পানি আমাদের অধিকার। ভারত এই পানি আটকে রাখার কে? ট্রানজিট আমরা দিবো কি দিবো না সেটা পরে ভাববো, আগে পানি দাও। কিন্তু সেই বড় ভাই সমস্যা! তাকে কিছু বলাও যায় না।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ব্যাপারটা আরো মারাত্মক। ভারতের টিভি চ্যানেল গুলো বাঙলাদেশের সবখানে দেখা যায়। তারা টিভি প্রোগ্রাম তৈরি করে আমাদের কথা মাথায় রেখে। অথচ আমাদের চ্যানেল গুলো ওদের দেশে দেখার সুযোগ নেই। আজকে আমাদের দেশে পাখি ড্রেস, কিরনমালা ড্রেসের জন্য হাহাকার লেগে যায় অথচ আমাদের তাঁত শিল্প হুমকির মুখে। নিজেদের থেকে আমরা ওদের কপি করতে বেশি পছন্দ করছি। বাঙলাদেশের মিউজিক এশিয়ায় সেরা অথচ দেশের নিউ জেনারেশন এর একটা অংশ হিন্দি গান ছারা কিছুই বুঝে না। এই দোষ অবশ্য পুরোপুরি ভারতকে দিলে হবে না।

Smile


সবচেয়ে আলোচিত যেটা সেটা হচ্ছে সীমান্তহত্যা। ভারত শত শত বাঙালিকে সীমান্তে হত্যা করে প্রতিবছর। হয়ত নিজের দেশের স্বার্থ আছে বলেই করে কিন্তু ফেলানির মত কিছু কিছু ব্যাপার মানা যায় না। একটা মেয়েকে মেরে কাটাতাঁরে ঝুলিয়ে রাখার মত অমানবিকতা আর কি হতে পারে? সেখানে ঝুলে মেয়েটা ঘন্টার পর ঘন্টা পানি পানি করে মারা গেছে। তারপর সেই বি এস এফ সদস্যকে যখন আদালতে নেয়া হলো তখন জানা গেলো এর আগে ও সে আরেকজনকে হত্যা করেছে। অতঃপর আদালত কি রায় দিলো জানেন! মুক্তি দিয়ে দিলো তাকে। দুজন মানুষ খুনের জন্য এই শাস্তি! এখনো নির্বিচারে বাঙলাদেশি হত্যা করা হয় সীমান্তে। বড় ভাই বলে প্রতিবাদ ও করতে পারি না আমরা।
এরকম শত শত দিক আছে যেভাবে ইন্ডিয়া আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। তারপর ও তারা আমাদের বন্ধু। কারন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের সমর্থন অনেক বড় একটা শক্তি ছিলো আমাদের। এখনো কোনো সমস্যায় পরলে ভারতকেই বন্ধুরূপে সবার আগে কাম্য থাকে আমাদের। আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা বন্ধু প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মতই। কিন্তু বন্ধু যখন একটু শক্তিশালী হয়ে যায় তখন ছোটো ছোটো অনেক খোঁচা আপনি খাবেন সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের ভূখন্ড ছোটো কিন্তু আমাদের ক্ষমতা ও আছে সবার থেকে এগিয়ে যাওয়ার। কাউকে এইটুকু ফিরিয়ে দিতে না আমাদের আগাতে হবে যাতে আর কেউ ছোটো না ভাবতে পারে সে জন্য। তখন ভারত ও তাল মিলাতে আসবে তবে সেটা যেভাবেই হোক ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকাটা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমি চাইবো সেটা যেনো বন্ধুতে-বন্ধুতে সমান সমান হয়.... 

এ কেমন নারীবাদ?




একজন নারীবাদী মেয়ে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে এ বছরের শুরুতে এড হয়েছিলো। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নাস্তিক যদিও আর দশজনের মত লেখালেখি করে না (আমি দেখি নাই আরকি)। এরকম একজন মেয়েকে স্বাভাবিক ভাবেই দারুন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হবে।

যাইহোক, গত ফেব্রুআরিতে মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করেছিলো। আমি তাকে খুব ভালো করে চিনতাম ও না, টুকটাক কথা হয়েছে কখনো কখনো। ভদ্রভাবে তাকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন করতেই হয়েছিলো। সেখান থেকেই প্রথম তার ব্যাপারে কিছু জানলাম আর ভয়ংকর কিছু আবিষ্কার করলাম।

সে আমার উপরে মারাত্মক ভাবে ক্রাশ খেয়েছে যদিও তার বয়ফ্রেন্ড আছে একটা। সেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক ইদানীং ভালো না (২ মাসের জন্য দার্জিলিং গেছে এ নিয়ে)। তাই সে এখন আরেকটা সম্পর্কে জরাতে চায়। :3 একটু আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে সে ফিরে এলে কি হবে? তখন বল্লো, ফিরলে ম্যানেজ করা যাবে নে ; আর সে তো কিছু জানছেও না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে এরকম একাধিক সম্পর্ক করাটাকে তার নারী স্বাধীনতার অংশ ভাবে। একটা ছেলে যদি ৫ টা সম্পর্ক করতে পারে তো একটা মেয়েও পারে। এটা বলে সে আবার আমাকেও উৎসাহিত করতে চায়। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার যে গার্লফ্রেন্ড আছে তা সে জানে কিনা!! সে সেটাও জানে আর এটাকে তার সমস্যা মনে হয় নি। ব্লোক মারার আগে একবার তাকে নারীবাদের মানেটা বুঝাতে চাইছিলাম কিন্তু পরে আর সেই চেষ্টা করি নি। এদের ও ভন্ডামি করতে পীরের দরকার হয় আর তারা সেই নারীবাদী পীরের অন্ধভক্ত হয়েই থাকে। তাই জঙ্গিদেরকে বুঝানো আর এদেরকে বুঝানো সমান কঠিন কাজ। আমার এই প্যারা টেনে নেয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না।


আপনারা জানেন এরকম তথাকথিত নারীবাদীদের পরিমান নেহায়েত কম না। নারীবাদ ব্যাপারটা বেগম রোকেয়ার লেখা পড়লে বুঝা যায়। এই মেয়েগুলো সেগুলো পড়েছে কিনা জানি না কিন্তু কিছুই তার ধারন করেনি নিশ্চিত। কারন এসব মেয়ে নারীবাদী ট্যাগটা লাগায় ই তাদের হাজারটা নোংরামিকে জায়েজ করতে।" একটা ছেলে এই করছে তাই আমার ও করতে পারি" এই যুক্তি দেখিয়ে নিজের মত নোংরামি করার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে। একটা ছেলে যখন রাস্তায় মূত্রত্যাগ করে সেটাও তাদের অনুসরণ করতে হবে। অথচ কোনো ভালো ছেলেই রাস্তায় মূত্রত্যাগ করে না। তারা শুধু একটা নষ্ট ছেলেকেই অনুসরণ করতে চায়। যেই ছেলেটার একাধিক গার্লফ্রেন্ড থাকে সে কি আদৌ ভালো ছেলে? তাকে ফলো কেনো করতে হবে!! কারন ওখানেই, নারী স্বাধীনতা শব্দটাই এখানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এখন যদি কেউ নারীবাদী শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে তো তাকে সরাসরি দোষ দেয়া যাবে না। কারন নারীবাদ ব্যাপারটা তথাকথিত নারীবাদীরাই বুঝে না। অন্যরা বুঝে উলটে ফেলবে আশা করা যায় না আর তাদের কাছে হয়ত এসব নারীবাদী ট্যাগ লাগানো নারীদের দেখে দেখে "নারীবাদ" শব্দটাকেই নোংরা মনে হবে।

যেটা খারাপ সেটা সবার জন্যেই খারাপ হবে। একটা মেয়েকে দেখে হ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকা যদি লুলামি হয়তো একটা ছেলেকে দেখে হ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকাও লুলামিই। রাস্তায় মূত্রত্যাগ যেই করুক সবার ই শাস্তি হওয়া উচিত।
নারী স্বাধীনতা মানে সিগারেট, মদ, উচ্ছৃঙ্খলতা, লুলামি, একাধিক সম্পর্কে জরানো বা অনৈতিক কিছু করার স্বাধীনতা না। পুরুষেরা যেরকম "আমি পুরুষ মানুষ" কথাটাকে সামনে রেখে হাজার রকমের বেহায়াপনা করার টিকেট পেয়ে যাচ্ছে এখন দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মাঝেও কিছু "নারী স্বাধীনতা " কে সামনে রেখে বেহায়াপনায় নেমে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎকালে হয়ত একপাশে উচ্ছৃঙ্খল নারী অন্যপাশে বস্তাবন্দী নারী ছাড়া কাউকে দেখতে পাবো না। যখন নারীরাই নারীবাদকে সকাল বিকাল ধর্ষণ করবে তখন সুবিধাভোগী পুরুষরাতো আরো মাথায় চরে বসবে। একেকজনের তখন ৪/৫ টা করে নারীবাদী গার্লফ্রেন্ড থাকবে :3 অন্যদিকে মোল্লারাও এসব উচ্ছৃঙ্খলতার দোহাই দিয়ে অন্য মেয়েদের বস্তাবন্দী করে রাখবে। নারীরা শুধু এক কূপ থেকে উঠে অন্য কূপে গিয়ে পরছে।

অথচ নারী স্বাধীনতার কথা হওয়া উচিত ছিলো অন্যরকম।
রান্নাঘরে জীবন না পার করে পুরুষের সাথে উপার্জনের প্রতিযোগীতায় নামা। ধর্মকে ব্যবহার করে নারীদের ক্রমাগত নিষ্পেষিত হওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। রাজনীতি করা, সমাজে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো, সকল অনৈতিক বিষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কিংবা সকল বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার যোগ্যতা অর্জন করা। এটাই তো নারী স্বাধীনতা, নারীবাদ। একটা ছেলের রাত ৯টায় কাজ থাকলে একটা মেয়ের ও থাকতে পারে। প্রথার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে হবে নিজের মুক্তির স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে। আর স্বাধীনতা মানেই উচ্ছৃঙলতা না, অনৈতিক কাজ করার অনুমোদন পাওয়া না। সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক বলেই আলাদা করে নারীবাদের দরকার আছে। তাই পুরুষরা পৃথিবীর ৯৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, এখানে নারীদের জায়গা করতে হবে। পুরুষরা পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ ধর্ষণ করে সেখানে জায়গা করতে গেলে আপনাকে ধর্ষকের সমান ঘৃণাই পেতে হবে। যেটা অনৈতিক সেটা সবার জন্যই বর্জনীয় হওয়া উচিত নয় কি?

( একটা অদ্ভুত কারনে আমার মনে হয় এরকম মানুষেরাই প্রগতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি)

কত ক্ষুদ্র আমরা! (প্রথম পর্ব)


আমাদের মহাবিশ্ব কত বিশাল সেটা নিয়ে অনেকের হয়ত প্রচুর আগ্রহ আবার কারো হয়ত একেবারেই নেই। তবে প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ সেটা জানতে চেয়েছে আর যত জেনেছে তত অবাক হয়েছে। এর বিশালতা অবিশ্বাস্য, কল্পনা করার জন্যে অনেক বড় এই মহাবিশ্ব। আর আছে এর নানান উপাদান যেগুলোর তুলনায় আমাদের শহর বা পৃথিবী আরো অনেক অনেক ছোটো। আমরা যদি এই মহাবিশ্বকে কল্পনা করতে চাইতো আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে আমরা আসলে কত ছোটো! পৃথিবীর সাথে অন্যদের তুলনা করলেই সেটা বুঝা যাবে, সাথে ধারনা পাওয়া যাবে মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কেও।

সূর্য্যের তৃতীয় গ্রহ আমাদের প্রিয় পৃথিবী। এর একেকটা শহর থেকে আরেকটা শহর, এক দেশ থেকে আরেক দেশ কত দূরের লাগে। অথচ এই সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি আমাদের পৃথিবী থেকে ১৩০০ গুন বড়। ইশ পৃথিবী যদি বৃহস্পতির সমান হত তাহলে বাঙলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব হত বর্গকিলোমিটার প্রতি একজন মাত্র। পৃথিবীর ব্যাস ১২৭১০ কি.মি আর বৃহস্পতির ব্যাস ১,৪২,৯৮০ কি.মি প্রায় (শনি গ্রহের ব্যাস ১২০,৫৩৬ কি.মি. প্রায়)। কত বড় বড় গ্রহ ভাবা যায়! কিন্তু সূর্য্যের কাছে এই বৃহস্পতি গ্রহটা মার্বেলের মত ; সেক্ষেত্রে সূর্য্যের আকৃতিটা হবে একটা ফুটবলের সমান। সূর্যদেবের ব্যাসটা বিশাল, প্রায় ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হলো আমাদের সূর্যিমামা। কিন্তু অন্যান্য নক্ষত্রদের তুলনায় আমাদের সূর্য কিন্তু বেশ ছোটো।

সূর্যের থেকেও বড়! সেটা কত বড় তাহলে!! অন্য কিছু নক্ষত্রের ব্যাসের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে সূর্য আসলে ছোটো একটা নক্ষত্র। যেমন, সিরিয়াসের কথাই ধরা যাক, এর ব্যাস প্রায়, ২৩৮০০০০ কি.মি.। আমাদের থেকে ৮.৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্র রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। সিরিয়াস ক্রমশই আমাদের কাছে আসছে ; এ কারণে আগামী ৬০,০০০ বছরে এর উজ্জ্বলতা আরো বেড়েই চলবে। এরপরে আশা যাক পলুক্সের কাছে। এটা মিথুন রাশিমন্ডলে থাকা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যার ব্যাস হচ্ছে প্রায় ১২ লক্ষ ২৪১ হাজার কিলোমিটার প্রায়।
রাতের আকাশের তৃতীয় উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম আর্কটুরুচ। লিব্রা ও স্করপিয়ন্সের মাঝে আছে এই নক্ষত্রটি যার ব্যাস হচ্ছে ৩৫ লাখ ৭৫১ হাজার কিলোমিটার প্রায়। এটা একটা অরেঞ্জ জায়ান্ট নক্ষত্র যার সাথে আমাদের সূর্যকে তুলনা করা মানে হচ্ছে একটা ফুটবলের সাথে শর্ষে দানার তুলনা করা।

কিন্তু এ তো ক্যাবল বৃহৎ নক্ষত্রের শুরু, এরপরে আসবে সুপার জায়ান্ট গুলো। এই সুপারজায়ান্ট নক্ষত্রগুলো নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো, এখন আপাতত এদের আকৃতিতেই থাকি।
প্রথমেই যে সুপার জায়ান্টের কথা আসে সেটা হচ্ছে অরিয়নের রিগেল। এটা অরিয়নের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং রাতের আকাশে থাকা উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের তালিকায় এর অবস্থান সপ্তম। ওই ব্লু সুপারজায়ান্ট এর ব্যাস হচ্ছে ১০৩,০০০,০০০ কি.মি.। কেউ ধাক্কা খাবেন না এখুনি, সামনে আরো আসছে অনেককিছু। আমাদের থেকে ৬৪৩ আলোকবর্ষ দূরে কালপুরুষের বেটেলগজ হচ্ছে একটা সুপার রেড জায়ান্ট নক্ষত্র। এর ব্যাস হচ্ছে ৮৬০,০০০,০০০ কিলোমিটার প্রায়।
বৃশ্চিক রাশির মূল তারাটার নাম আন্টারেস। এটাও একটা রেড সুপারজায়ান্ট যেটা আমাদের থেকে প্রায় ৫৫০ আলোকবর্ষ দূরে আছে। আকাশে জায়গাদখলে মঙ্গলের এই প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যাস হচ্ছে ১,১০৮,০০০,০০০ কি.মি.। এরকম অগণিত সুপারজায়ান্ট নক্ষত্র রয়েছে মহাবিশ্বে। যাদের এক একটা আকার কল্পনাও করা যায় না। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় নক্ষত্রটি হচ্ছে VY Canis Majoris। এটার ব্যাস হচ্ছে, ২,৯২১,০০০,০০০ কিলোমিটার। যেটার ব্যাস এত বড় সেটার আকৃতি কিরকম হবে কল্পনা করা কঠিন। এর কাছে সূর্য একটা সুইয়ের মাথার থেকেও ছোটো হবে এবং দেখাই যাবে না।




আমরা আসলে কত ছোটো সেটা কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।এতক্ষণ শুধু তারা আর গ্রহ নিয়েই বললাম। মহাবিশ্বে রয়েছে আরো বিস্ময়কর অনেক কিছু, যেখানে হয়ত রহস্যেঘেরা অনাবিষ্কৃতদের সংখ্যাও অনেক। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ভেবে আসছে এই জগৎ সম্পর্কে, এখনো ভেবেই যাচ্ছে। কৌতূহল ও জানার আগ্রহ মানুষের কাছে ক্রমশই স্পষ্ট করছে মহাবিশ্বের চিত্র। আমার জানা তার থেকেও অনেক অনেক কম। তবুও পরবর্তী পোস্টে নেবুলা, ব্ল্যাকহোল আর গ্যালাক্সির হিসেবে আমাদের অবস্থাটা আরেকটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করবো।

মীর জাফরের বংশধর


নাজাফি বংশের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মীর জাফর। যার পুরো নাম সূজা উল মূলক হিশাম উদ-দৌলা মীর মোহাম্মাদ জাফর আলি খান মহব্বত জঙ। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক এই মীর জাফরকে কে না চেনে!!! পরবর্তিতে তাদের বংশধরেরা তাই তাদের নামের পদবি পরিবর্তন করে মির্জা রাখে।
এই নাজাফি বংশের শেষ নবাবের নাম ছিলো মনসুর আলী খান। তার ছেলে হচ্ছে সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ফতেহ আলী যিনি ইস্কান্দার মির্জার বাবা। হিসেব করে দেখা যায় ইস্কান্দার মির্জা মীর জাফরের চতুর্দশ পুরুষ।
ইসকান্দার মির্জা ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি করে।এটাই ছিলো পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সামরিক শাসন। কিন্ত তিনিও বেশদিন ক্ষমতা দখল করে রাখতে পারেন নাই। বিশ্বাসঘাতকের প্রথম পুরুষ ও চতুর্দশ পুরুষ উভয়েই দেশের বারোটা বাজিয়ে গেছেন কিন্তু কেউই ক্ষমতা দখল করে রাখতে পারে নি।
ইস্কান্দার মির্জা বাঙালি ছিলেন।সেনাবাহিনীর চৌকষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ইশফাকুল মজিদ একজন বাঙালী ছিলেন এবং যোগ্যতা ও সিনিয়রিটির বিচারে তারই পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান হওয়ার কথা ছিলো। অথচ ইস্কান্দার মির্জা এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করে এবং লিয়াকত আলী খাঁনকে কুমন্ত্রণা দিয়ে, বাঙালী জেনারেল ইশফাকুল মজিদকে বাদ দিয়ে আইয়ুব খানকে পাকিস্থানের প্রথম সেনাপ্রধান করেন।
মজার ব্যাপার হলো,এই আইয়ুব খানের হাতেই ইস্কান্দার মির্জা উৎখাত হন।বৃটিশরা যেরকম মীর জাফরকে বিশ্বাস করে নি তেমনি আইয়ুব খান ও ইস্কান্দার মির্জাকে বিশ্বাস করতে পারে নি।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি ইংল্যাণ্ডেই ছিলেন।১৯৬৯ সালে ইস্কান্দার মির্জা মৃত্যুবরণ করে।
মীর জাফরের অন্যান্য বংশধরদের মধ্যে আরো আছেন...
-মীর রুহুল আমীন ওরফে চোখা মিয়া যিনি কিনা একজন বিশিষ্ট পাকিস্তানী দালাল এবং রাজাকার।
-মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর , মীর রুহুল আমীনের সন্তান। বর্তমান বিএনপি নেতা ।
- মীর্জা গোলাম হাফিজ
অর্থাৎ , মীর জাফরের বংশধরেরা এখনো আছে যারা তার পূর্বপুরুষদের বদআদর্শ ধরে রেখেছে। নবাবের আদর্শ ধরে না রাখা নিয়ে আফসোস নাই কারন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মোটেই আদর্শবান নবাব ছিলেন না। মদ আর নারীতে ডুবে থাকা একজন নবাবের আদর্শ ধরে রাখলেই বরং ভয়ংকর ব্যাপার হত।
বাঙলাদেশের বর্তমান রাজনীতিকে অনেকটা সে সময়ের সাথে তুলনা করা যায়। একদল মীর জাফরের মত দেশের অমঙ্গলকামী অন্যদল নবাবের মত ক্ষমতার যত প্রকার নষ্ট ব্যবহার সম্ভব তা নিয়ে ব্যস্ত। এখন ইংরেজদের ভূমিকায় কে আসবে সেটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।