বিংশ শতাব্দীর ভয়াবহ ১০ যুদ্ধ
যেকোনো
যুদ্ধ একটি জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। যুদ্ধকালীন সহিংসতায় নিহত হয় অসংখ্য
মানুষ, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি আর ব্যাহত হয় নিরাপত্তা। একটা দেশ
বা জাতির জন্য যুদ্ধের থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত মানব
ইতিহাসে যুদ্ধ সবসময় ই ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তারমধ্যে বিংশ শতাব্দী ছিল সবথেকে
প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে এই শতাব্দীতেই
সংগঠিত হয়েছিল ২ টি বিশ্বযুদ্ধ ও অসংখ্য বিপ্লব।
বিংশ
শতাব্দীতে ঘটা এ যুদ্ধগুলো বিশ্বজুড়ে শক্তির ভারসাম্যে প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের
কারণে নতুন নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে আবার অনেক পরাশক্তির পতন ও ঘটেছে।
স্বাধীন হয়েছে শত দেশ আবার সম্পূর্ণ নিভে গেছে কোনো কোনো জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন।
কিন্তু সবগুলো যুদ্ধেরই একটা সাধারণ মিল ছিল, সেটা হল অগণিত মানুষের মৃত্যু। বিংশ
শতাব্দীর সবথেকে ভয়াবহ ১০ টি যুদ্ধ নিয়েই আজ লিখছি।
১০)সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ(১৯৭৯-১৯৮৯)- সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে
কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিজম বিরোধী আফগান গেরিলাদের মধ্যে। তখন
আফগানিস্তান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি থেকে নিরাপদ থাকতেই সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল আফগানিস্তানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে
থামাতে যুক্তরাষ্ট্র তখন আফগানিস্তানের ইসলামী প্রতিরোধ
বাহিনীকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ প্রদান করে। যুদ্ধে
প্রায় ১৩০০০ সেনা হারানোর পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ছেরে চলে আসে। অপরদিকে এ
যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ আফগান মুজাহিদ ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিল।


০৮) বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ(১৯৭১)- পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদের উপরে ঝাঁপিয়ে পরে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে। এরই মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে নিহত হয় ৩০ লাখের ও বেশি বাঙালি। মার্কিন নীলনকশা অনুযায়ী হত্যা করা হয় শত শত বুদ্ধিজীবী। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত বাঙলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল তখন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছিল পাকিস্তানকে। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আর্মি ঢাকায় আত্মসমর্পন করে এবং স্বাধীন বাঙলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়।


০৫) ভিয়েতনাম যুদ্ধ(১৯৫৫-১৯৭৫)- ভিয়েতনামের দুটি অংশ ছিল, উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম। উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণে ছিল কমিউনিস্টরা। অপরদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্টবিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। উত্তর ভিয়েতনাম চেয়েছিল সমগ্র ভিয়েতনামকে নিয়ে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠন করতে। কিন্তু মার্কিনিরা ভয় পেয়েছিল যদি পুরো ভিয়েতনাম কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তাহলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র সাম্যবাদ ছরিয়ে পরবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে জরিয়ে পরে। যুদ্ধে প্রায় ৩২ লাখ ভিয়েতনামি এবং ৫৮০০০ মার্কিন সেনা নিহত হয়। ভিয়েতনামে যে পরিমাণ বোমা ফেলা হয়েছিল তা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিগুন। এরপরেও কমিউনিস্টদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায়। ১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে চলে আসে।
![]() |
Viet Cong |
০৪) রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ(১৯১৭-১৯২২)- রাশিয়ার গৃহযুদ্ধটি বলশেভিক রেড আর্মি ও হোয়াইট আর্মির মধ্যে সংগঠিত হয়। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে থাকা রেড আর্মি ছিল সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং হোয়াইট আর্মি ছিল পুঁজিবাদ তথা সমাজতন্ত্রের বিকল্প ভাবধারার। ১৯১৭ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পরে এ যুদ্ধ শুরু হয়। রেড আর্মিকে থামাতে তখন রাশিয়ার বাইরের অনেক শক্তিও রেড আর্মির বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল এ সময়। কিন্তু ১৯২১ সাল নাগাদ রেড আর্মির কাছে হোয়াইট আর্মি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পরে। এ যুদ্ধে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ নিহত হয়।
![]() |
Red Army |
০৩) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ(১৯১৪-১৯১৮)- এমন একটি যুদ্ধ যাতে পতন ঘটেছে শক্তিশালী ৩ টি সাম্রাজ্যের। পাল্টে গিয়েছিল সমগ্র পৃথিবীর রাজনীতি। যুদ্ধটি শুরু হয় ১৯১৪ সালের ২৮ জুন হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যর উত্তরাধিকারি আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফারদিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। সমগ্র ইউরোপ এ যুদ্ধে জরিয়ে পরেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে রূপ দিয়েছিল এবং পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট স্টেট সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম হয়েছিল। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ।


0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন