আমার শিরায় জ্বলে আগুন,
রুদ্ধশ্বাসে পুড়তে চায়।
আমার চোখে ঝড়ো মিছিল,
শ্লোগানে বদ্ধ উপমায়।

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

জার্মানি যদি ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হত!




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। কেনো এই যুদ্ধ হয়েছিল বা এর ফলাফলই বা কি হয়েছিল সেটা সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। তবে যদি ফলাফলটা একটু অন্যরকম হত অর্থাৎ সোভিয়েত-জার্মান যুদ্ধে যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন হেরে যেত তাহলে কি হত? কিংবা জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করতো তাহলেই বা কিরকম বিশ্ব পেতাম আমরা!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার খুব অল্প দিনের মাঝেই জার্মানি প্রায় সমগ্র ইউরোপ দখল করেছিল। অপর দিকে জার্মানির মিত্র জাপান ও একইভাবে সমগ্র দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় তার কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাছাড়া চীন জাপান যুদ্ধ তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই লেগেছিল, সেখানেও জাপান প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছিল ক্রমাগত। তাই দেখা গেলো এশিয়াতে জার্মানির জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশিষ্ট ছিল শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।

Comrade Stalin
প্রায় ২ কোটি ২৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন তখন কমরেড জোসেফ স্ট্যালিন। জোসেফ স্ট্যালিনের নেতৃত্বে থাকা বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করা সহজ কাজ ছিল না। তবে যুদ্ধের উন্মাদনায় মত্ত হিটলার সোভিয়েতের দিকেই পা বাড়াল। জার্মানদের এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন বারবারোসা। অতীতে রাশিয়া দখলের চেষ্টা করেছে নেপোলিয়ানসহ অনেকেই কিন্তু কেউই সফল হয়নি। সফল হয়নি হিটলার ও। হিটলারের পাঠানো প্রায় ৩৮ লক্ষ সেনাবাহিনী যুদ্ধের শুরুতে বেশ সফলতা লাভ করে। কিন্তু সোভিয়েত নাগরিকদের প্রবল দেশপ্রেম সাথে কমিউনিজমের শক্তির কাছে পরাজিত হয় জার্মানরা। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি আক্রমণ করে। এরপর সেখানে জার্মানির হারের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

এখন কথা হল, জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করত তাহলে কি হত! জার্মানি খুব অল্পদিনেই ইউরোপে তার কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল। তখন অজেয় হিসেবে ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারানো ছিল অসম্ভব। তাই জার্মানি যদি সোভিয়েত আক্রমণ না করে ইউরোপ নিয়েই খুশি থাকতো তাহলে হয়ত সমগ্র ইউরোপই আজকে জার্মানদের অধীনে থাকতো। এক্ষেত্রে জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে শুধু জার্মান ভাষাতে কথা বলা বাধ্যতামূলক করা হত।


Soviet Union




কিন্তু যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির কাছে হেরে যেত?
মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের জার্মানির বিরুদ্ধে জয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোর ঘুরে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের আগে জার্মানিকে আর কেউই হারাতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে হারাতে পেরেছিল বলেই পরবর্তিতে ইউরোপ ও সমগ্র পৃথিবী জার্মানদের ধ্বংসযজ্ঞ হতে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত হারলে পুরো ইতিহাসটাই আলাদা হত।

বর্তমান পৃথিবী নিশ্চিতভাবেই একটা নরকে পরিণত হত। হিটলার ছিল একজন প্রচন্ড কমিউনিজম বিদ্বেষী।তাই মানবিক পৃথিবীর লক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যেসব কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো তা আর জন্ম হত না। জন্ম হত না কমিউনিস্ট চীনের ও। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানদের কাছে পরাজিত হলে জার্মানি ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে পুরো পৃথিবী দখল করে নিত।

Holocaust
হিটলার ইহুদীদের প্রচন্ড ঘৃণা করত। যুদ্ধকালীন সময়ে সে হত্যা করেছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী। এই গণহত্যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। জার্মানির অধীনে পৃথিবী চলে এলে হয়ত কোনো ইহুদী বেঁচে থাকতো না। ফলে ইজরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হত না। থাকতো না আইনস্টাইনসহ প্রতিভাবান ইহুদীদের নাম কোথাও। বিশ্বসেরা ইহুদীদের পণ্য গুলো থাকতো না। আমরা পেতাম না পেপসি, কোকাকোলা, আইবিএম, ইন্টেলের মত ব্র্যান্ডগুলো। পৃথিবী পিছিয়ে যেত শত বছর পিছনে। হিটলার ঘৃণা করত কালোদের ও। পৃথিবীর কালো চামরার মানুষদের ও হয়ত সে ইহুদীদের মত হত্যা করত।


Cold War
জার্মানির অধীনে থাকা বিশ্বে কোল্ড ওয়ারের সুযোগ হত না। কমিউনিজম বনাম ক্যাপিটালিজমের চলমান এই দ্বন্দ্ব হয়ত তখনই ঘুচে যেত। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে কোল্ড ওয়ার চলাকালীন যে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা চলছিল সেটা হত না। আধুনিক বিজ্ঞান পিছিয়ে যেত অনেক। কখনো হাইড্রজেন বোমা সৃষ্টি হত না। আর জাতিসংঘ জন্ম লাভের কথা চিন্তাও করা যায় না। পৃথিবীতে থাকতো না কোনো পর্নগ্রাফি। পড়াশুনার পাশাপাশি মিলিটারি ট্রেনিং নিতে হত বাধ্যতামূলকভাবে। পুরো পৃথিবীতেই হয়ত জার্মান ভাষাই চলতো তখন।

এ বিষয়ে এই ইউটিউব ভিডিওটি সবাই দেখতে পারেন-
https://www.youtube.com/watch?v=mt0NRduC9Bc



0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন