আমার শিরায় জ্বলে আগুন,
রুদ্ধশ্বাসে পুড়তে চায়।
আমার চোখে ঝড়ো মিছিল,
শ্লোগানে বদ্ধ উপমায়।

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

ভারত-চীন যুদ্ধ কি আসন্ন! জিতবে কে?



চীন এবং ভারতের মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত। এই সীমান্ত বিরোধ নিয়েই ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৬২ সালে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত একমাস ধরেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে চীন-ভারত সীমান্তে। এই রণদামামা থেকে যদি ১৯৬২ সালের মত যুদ্ধ লেগেই যায় তাহলে সে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে?

চীন ভারত যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে সবার আগে দুদেশের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানা জরুরী। সামরিক ক্ষমতা দিয়েই বিচার করা হয় আসলে কার খুঁটিতে কত জোর। দেখে নেয়া যাক এ দুদেশের কার হাতে রয়েছে কীরকম অস্ত্র আর কার সেনাবাহিনী অধিক শক্তিশালী!



                             চীন                           বনাম                      ভারত 

                                                     ডিফেন্স বাজেট 
                     ২২০ বিলিয়ন ডলার 
                      ৫৫ বিলিয়ন ডলার

                                                                সেনাবাহিনী সাইজ 
                   ২৩ লাখ ৫০ হাজার প্রায়
               ১৩  লাখ ২৫ হাজার প্রায়

                                                             আণবিক বোমার সংখ্যা
                                      ২৭০ 
                                  ১২০ 

                                                          আইসিবিএম
                 DF5B : Range 15000 KM
                      Agni 5 : 8000 KM
                                                        
                                                       মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম 
                                      ১৭৭০
                                 ৩১০ 

                                                                               ট্যাঙ্ক
                                      ৯১০০
                                 ৬৪০০

                                                                     আর্মড যুদ্ধযান
                                      ৬৮০০
                                  ৪৮০০ 

                                                                     এয়ারক্র্যাফট 
                                      ৩১০০
                                  ২১০০

                                                                  এটাক হেলিকপ্টার 
                                ২১০
                                       ২০ 

                                                                           ডেস্ট্রয়ার  
                                        ২৮
                                       ১১  

                                                                                  ফ্রিগেট
                                        ৫০
                                     ১৪

                                                              সাবমেরিন 
                                        ৬৯ 
                                     ১৪ 


উপরের এই তুলনামূলক আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় চীন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু এটা শুধু পরিসংখ্যান, বাস্তব হয়ত এত সহজ হবে না। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্প্রতি বলেছেন, ১৯৬২ সালের ভারত এবং ২০১৭ সালের ভারত এক নয়। ভারত অরুনাচল রাজ্যে ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করেছে। গত একমাস যাবত সেখানে সৈন্য সংখ্যাও বাড়িয়ে চলেছে। ভারত বুঝাতে চাচ্ছে তারা প্রস্তুত।

অপরদিকে ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত লুয়ো ঝাউহুই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতকে শর্তহীনভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে চীন যে ছেরে কথা বলবে না সেটা বুঝাতে চীন ও সীমান্তে অধিক সেনা মোতায়েন করেছে, ভারতের দুটো বাঙ্কার ও উড়িয়ে দিয়েছে। হুমকি দিয়েছে সিকিমকে স্বাধীন করে দেবে আবার। উভয় পক্ষই সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে আছে।

১৯৬২ এর যুদ্ধে ভারত কত হাজার সেনা হারিয়েছিল সেটা নিয়ে ধোঁয়াসা রয়েছে। কেউ কেউ সংখ্যাটা ১০,০০০ এ টেনে নিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। সে যুদ্ধের কথা ভারতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে চীন। তাই হয়ত ভারত সেটাকে তাদের দুর্বলতা ভাবতে বারণ করে বলেছে, ২০১৭ সালে ভারত ১৯৬২ থেকে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সেই একই কথা তো চীনের ক্ষেত্রেও সত্যি! ১৯৬২ এর চীন ও তো এখনকার চীনের মত ছিল না। চীন এখন অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে। সামরিক দিকেও টেক্কা নেয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই। চীন গত কয়েক বছরে সামরিকভাবে হয়ে উঠেছে পরাশক্তি যার তুলনা হয় শুধু রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই।

চীনের সেনাবাহিনী প্রায় ২৪ লক্ষের কাছাকাছি শুধু এই জন্য চীনকে এগিয়ে রাখছি তা না। চীন তার দেশেই প্রয়োজনের ৮৫% এর ও বেশি অস্ত্র উৎপাদন করে। অন্যদিকে ভারত এখনো পুরোপুরি আমদানি করা অস্ত্রের উপরেই নির্ভরশীল। যুদ্ধ যদি ৬ মাস হয় তাও চীন যুদ্ধ করতে পারবে, যদি ১ বছর হয় তাও পারবে, যদি ২ বছর হয় তাও পারবে। কারণ অস্ত্র তারা নিজেরাই তৈরি করে। আবার চীনের অর্থনীতিও ভারত থেকে অনেক শক্তিশালী। একটা বড় পরিসরের যুদ্ধে হয়ত চীনের অর্থনীতি বাধাগ্রস্থ হবে কিন্তু ভারতের ক্ষতিটা হবে ভয়াবহ। এরপর সমরাস্ত্রের প্রতিটি দিকে ও চীন অনেক অনেক এগিয়ে আছে ভারত থেকে।

চীনের সুবিধা আছে আরো বেশ কিছু। প্রথমটা হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানের মত একটা রাষ্ট্রকে চীন সবসময় সাহায্য করেছে শুধুমাত্র ভারতকে চাপে রাখার জন্য। চীন-ভারত কোনো যুদ্ধ নতুন করে শুরু হলে পাকিস্তান বসে থাকবে না সেটা শতভাগ নিশ্চিত। চীনকে হুমকি দেয়ার আগে ভারত হয়ত এটা ভেবে দেখেনি সে কয়টা ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে পারবে? কয়টা সেনা বাঁচিয়ে ফিরতে পারবে? বীরের মত চীন বা পাকিস্তান সীমান্তে শহীদ হলে লাভ নেই, তাতে যুদ্ধ জয় হবে না। এর সাথে রয়েছে বিদ্রোহীরা। তারাও এই সুযোগে সব শক্তি দিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করবে। এক ভারতে যত বিদ্রোহ হয় দুনিয়ার আর কোনো দেশে এত বিদ্রোহ হয় বলে জানা নেই। একদিকে চীন অন্যদিকে পাকিস্তান এরপর যদি শুরু করে বিদ্রোহীরা তাহলে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে সেটা বুঝতেই পারছি আমরা।

এরকম একটা যুদ্ধ হলে ভারতের অবস্থা করুণ হয়ে যাবে। ভারতের প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকেই ভারত কোনো সমর্থন পাবে না। নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক এখন একদম তলানিতে। মায়ানমার চীনের সাথেই আছে। বাঙলাদেশ একদম নিরপেক্ষ থাকবে সেটা একটা বাচ্চাও বুঝে, আমাদের আর কোনো উপায় ও নেই।

চীন বিপ্লবের দেশ। কমিউনিস্টরা চীনের ক্ষমতায় বসে ১৯৪৯ সালে। কমিউনিস্ট চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটির কাছাকাছি। কিন্তু তারা শুধু কমিউনিস্টই নয় তারা একই সাথে চৈনিক ও। অন্যদিকে ভারতের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ১৯৬২ এর কথা ভুলে গিয়ে তারা আবার তাদের শক্তি দেখাতে চায়। কেউ যে ছার দিচ্ছে না আর ভবিষ্যতেও দিবে না সেটা নিশ্চিত। এখন এই লাগে লাগে করে যদি সত্যিই লেগে যায় তাহলে আমাদের ও ভাবতে হবে। ১৯৬২ তে এরকম আতঙ্কিত হওয়ার কারণ ছিল না। কিন্তু এখন যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করলে ভারতের বড় বড় শহরগুলো হামলার স্বীকার হবে আর এর রেশ হয়ত লাগবে বাঙলাদেশেও।
আমরা সবাই যুদ্ধের বিপক্ষে কিন্তু প্রয়োজন কিছু মানে না। এমনি এমনি চীন দক্ষিণ তিব্বতের( বর্তমানে ভারতের অরুণাচল) ৩০,০০০ বর্গমাইল এলাকার দাবী ছেরে দিবে আবার ভারত কাশ্মীর, লাদাখে বিশাল জায়গা হারিয়ে এখন আবার চীনের এই দাবী এমনি এমনিই মেনে নেবে সেরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

ইউটিউবে এ ব্যাপারে আমার ভিডিওটি দেখতে পারেন এখানে। Youtube Link

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

জার্মানি যদি ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হত!




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। কেনো এই যুদ্ধ হয়েছিল বা এর ফলাফলই বা কি হয়েছিল সেটা সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। তবে যদি ফলাফলটা একটু অন্যরকম হত অর্থাৎ সোভিয়েত-জার্মান যুদ্ধে যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন হেরে যেত তাহলে কি হত? কিংবা জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করতো তাহলেই বা কিরকম বিশ্ব পেতাম আমরা!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার খুব অল্প দিনের মাঝেই জার্মানি প্রায় সমগ্র ইউরোপ দখল করেছিল। অপর দিকে জার্মানির মিত্র জাপান ও একইভাবে সমগ্র দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় তার কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাছাড়া চীন জাপান যুদ্ধ তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই লেগেছিল, সেখানেও জাপান প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছিল ক্রমাগত। তাই দেখা গেলো এশিয়াতে জার্মানির জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশিষ্ট ছিল শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।

Comrade Stalin
প্রায় ২ কোটি ২৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন তখন কমরেড জোসেফ স্ট্যালিন। জোসেফ স্ট্যালিনের নেতৃত্বে থাকা বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করা সহজ কাজ ছিল না। তবে যুদ্ধের উন্মাদনায় মত্ত হিটলার সোভিয়েতের দিকেই পা বাড়াল। জার্মানদের এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন বারবারোসা। অতীতে রাশিয়া দখলের চেষ্টা করেছে নেপোলিয়ানসহ অনেকেই কিন্তু কেউই সফল হয়নি। সফল হয়নি হিটলার ও। হিটলারের পাঠানো প্রায় ৩৮ লক্ষ সেনাবাহিনী যুদ্ধের শুরুতে বেশ সফলতা লাভ করে। কিন্তু সোভিয়েত নাগরিকদের প্রবল দেশপ্রেম সাথে কমিউনিজমের শক্তির কাছে পরাজিত হয় জার্মানরা। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি আক্রমণ করে। এরপর সেখানে জার্মানির হারের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

এখন কথা হল, জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করত তাহলে কি হত! জার্মানি খুব অল্পদিনেই ইউরোপে তার কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল। তখন অজেয় হিসেবে ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারানো ছিল অসম্ভব। তাই জার্মানি যদি সোভিয়েত আক্রমণ না করে ইউরোপ নিয়েই খুশি থাকতো তাহলে হয়ত সমগ্র ইউরোপই আজকে জার্মানদের অধীনে থাকতো। এক্ষেত্রে জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে শুধু জার্মান ভাষাতে কথা বলা বাধ্যতামূলক করা হত।


Soviet Union




কিন্তু যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির কাছে হেরে যেত?
মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের জার্মানির বিরুদ্ধে জয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোর ঘুরে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের আগে জার্মানিকে আর কেউই হারাতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে হারাতে পেরেছিল বলেই পরবর্তিতে ইউরোপ ও সমগ্র পৃথিবী জার্মানদের ধ্বংসযজ্ঞ হতে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত হারলে পুরো ইতিহাসটাই আলাদা হত।

বর্তমান পৃথিবী নিশ্চিতভাবেই একটা নরকে পরিণত হত। হিটলার ছিল একজন প্রচন্ড কমিউনিজম বিদ্বেষী।তাই মানবিক পৃথিবীর লক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যেসব কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো তা আর জন্ম হত না। জন্ম হত না কমিউনিস্ট চীনের ও। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানদের কাছে পরাজিত হলে জার্মানি ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে পুরো পৃথিবী দখল করে নিত।

Holocaust
হিটলার ইহুদীদের প্রচন্ড ঘৃণা করত। যুদ্ধকালীন সময়ে সে হত্যা করেছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী। এই গণহত্যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। জার্মানির অধীনে পৃথিবী চলে এলে হয়ত কোনো ইহুদী বেঁচে থাকতো না। ফলে ইজরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হত না। থাকতো না আইনস্টাইনসহ প্রতিভাবান ইহুদীদের নাম কোথাও। বিশ্বসেরা ইহুদীদের পণ্য গুলো থাকতো না। আমরা পেতাম না পেপসি, কোকাকোলা, আইবিএম, ইন্টেলের মত ব্র্যান্ডগুলো। পৃথিবী পিছিয়ে যেত শত বছর পিছনে। হিটলার ঘৃণা করত কালোদের ও। পৃথিবীর কালো চামরার মানুষদের ও হয়ত সে ইহুদীদের মত হত্যা করত।


Cold War
জার্মানির অধীনে থাকা বিশ্বে কোল্ড ওয়ারের সুযোগ হত না। কমিউনিজম বনাম ক্যাপিটালিজমের চলমান এই দ্বন্দ্ব হয়ত তখনই ঘুচে যেত। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে কোল্ড ওয়ার চলাকালীন যে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা চলছিল সেটা হত না। আধুনিক বিজ্ঞান পিছিয়ে যেত অনেক। কখনো হাইড্রজেন বোমা সৃষ্টি হত না। আর জাতিসংঘ জন্ম লাভের কথা চিন্তাও করা যায় না। পৃথিবীতে থাকতো না কোনো পর্নগ্রাফি। পড়াশুনার পাশাপাশি মিলিটারি ট্রেনিং নিতে হত বাধ্যতামূলকভাবে। পুরো পৃথিবীতেই হয়ত জার্মান ভাষাই চলতো তখন।

এ বিষয়ে এই ইউটিউব ভিডিওটি সবাই দেখতে পারেন-
https://www.youtube.com/watch?v=mt0NRduC9Bc