ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্টদের উপরে চালানো ভয়ংকরতম গণহত্যা
১৯৬৫
সাল,ইন্দোনেশিয়া।
১ অক্টোবর একদম সকালে
সামরিক বাহিনীর জুনিয়র কিছু অফিসার ছয়জন জেনারেলকে হত্যা করে এবং রাজধানী জাকার্তার নিয়ন্ত্রণ নেয়। মেজর জেনারেল সুহার্তো তখন সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করে। ওইদিনই জেনারেল সুহার্তোর
পরিচালনাধীন সেনাবাহিনী বিদ্রোহী অফিসারদের নির্মূল করে ফেলে। কিন্তু একই সাথে তিনি এই সেনা অভ্যুত্থানকে কমিউনিস্টদের চক্রান্ত
বলে দায় কমিউনিস্টদের উপরে চাপিয়ে দেয়।
জেনারেল সুহার্তো |
এরপর যা
হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সহজ নয়। লিস্ট করে কমিউনিস্ট হত্যা করা শুরু হয়। এই
লিস্ট ইন্দোনেশিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে দিয়েছিল মূলত সি আই এ। সি আই এ ইন্দোনেশিয়ার
কমিউনিস্ট পার্টিতে তাদের অসংখ্য এজেন্ট আগেই ঢুকিয়ে রেখেছিলো। এতে করে লিস্ট তৈরি
করতে তাদের খুব বেগ পেতে হয় নি। এরপর কৃত্রিম সেনা অভ্যুত্থানের দায় চাপিয়ে দিয়ে
শুরু হয় সেই লিস্ট ধরে ধরে কমিউনিস্ট হত্যা ।
এই
হত্যাকাণ্ডে আরো অংশ নিয়েছিলো কমিউনিস্ট বিরোধী মুসলিমরা। সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের
ও তারা ছেরে দেয় নি। ধর্মের কথা বলে সাথে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে
তাদেরকে সহজেই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত করা গিয়েছিলো। যদিও কমিউনিস্ট বিরোধী সেসব
প্রোপাাগান্ডা সেনাবাহিনী কখনই প্রমাণ করতে পারে নি।
ইন্দোনেশিয়ায়
কমিউনিস্টরা ছিলো চীন ও সোভিয়েত বলয়ের বাইরে সবচেয়ে শক্তিশালী কমিউনিস্ট দল। তাই
সাম্রাজ্যবাদীরা বুঝে গিয়েছিল সুকর্ণ ( ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ) এর
পতনের পরে শক্তিশালী কমিউনিস্টরাই ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষমতায় আসবে। এর আগেও সুকর্ণ
কমিউনিস্টদের সাথে একরকম ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই রেখেছিল। তাই তারা কমিউনিস্টদের
ইন্দোনেশিয়া থেকে একদম মুছে ফেলতে চেয়েছিলো।
গণহত্যা
এত প্রকট রূপ ধারণ করেছিল যে ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সর্বত্র লাশের
গন্ধ পাওয়া যেত। মাছেরা লাশ খাচ্ছে এই জন্য দীর্ঘদিন মানুষ মাছ খাওয়া বর্জন
করেছিল। এই দশ লক্ষ কমিউনিস্ট হত্যার মাধ্যমে আমেরিকা এশিয়ায় তার চূড়ান্ত প্রভাব
দেখালো। গণহত্যায় আমেরিকা যদি সম্পৃক্ত না থাকতো তাহলে বিশ্ববাসীকে এখন ভিন্ন এক এশিয়া দেখতে হতো।
আজকে
সেই ইন্দোনেশিয়ার কি অবস্থা! ১৯৬৫ তে জেনারেল সুহার্তো আমেরিকার সহায়তায় ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবসময় আমেরিকার সহায়তা পেয়ে গেছে।
দেশটাকে একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীকে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিলো আইনের ঊর্ধ্বে। ১৯৯৮ তে সেনাবাহিনীর পতন ঘটার পরেও তারা এখনো বিচার
বিভাগের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছে। সুহার্তোর কারনে পূর্ব তিমুরে
ইন্দোনেশিয়ার অধিগ্রহণ ও হস্তক্ষেপের ফলে প্রায় এক লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটে। এখনো তাদের বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় না। সন্ত্রাসবাদের
প্রতি তাদের সমর্থন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ও পড়ানো হয় ১৯৬৫
এর সেই গণহত্যা ছিলো বীরত্বপূর্ণ কাজ।
সুহার্তোকে
বলা হয় আধুনিক সময়ের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ও হিংস্র রাষ্ট্রনেতা। তার
সমাজতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড দেশকে একসময় স্থবরতার দিকে নিয়ে যায়। এখনো সেখানে
বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তবে, এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫০ বছর পরে এই রোমহর্ষক গণহত্যার বিচার দাবী করেছে। যতদূর জানা
যায় নানা প্রতিকূলতার পরেও এখন এই গণহত্যার বিচারে সমান্য
অগ্রগতি হয়েছে ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন