আমার শিরায় জ্বলে আগুন,
রুদ্ধশ্বাসে পুড়তে চায়।
আমার চোখে ঝড়ো মিছিল,
শ্লোগানে বদ্ধ উপমায়।

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

The influence of the media during the 2016 presidential election in the United States



The US media had a major influence on the US presidential election in 2016. The media's role was more controversial than ever before. Such a shameless position from the media had never been seen before. Some US television networks and magazines openly supported Donald Trump, while others only portrayed the negative aspects of Hillary Clinton. In reality, television channels are responsible for the rise of a candidate like Trump. I'm not saying that Trump is a bad person, but the truth is he is not the ideal candidate for the USA. Nevertheless, he won the election, and the US media played a role in that.

In the United States presidential election, the media plays a crucial role in determining the outcome. Since the 1960s, media influence has been incredibly important in winning elections in the USA. Most voters have busy lives, so they choose their preferred candidate based on what they see on television. The media often focuses on issues related to the candidates' personal lives, which are sometimes more important than daily news.

During the 2016 US presidential election, some US media outlets took controversial positions. Hillary Clinton consistently advocated for improving the lives of low-income workers and immigrants, which led her to propose increasing taxes for the wealthy. On the other hand, real estate businessman Trump aligned himself with the interests of the wealthy class. For him, the elite of society were crucial. Since the owners of TV channels and newspapers tend to be wealthy, their influence can be seen in the media's positive coverage of Trump. Some analysts even argued that the media transformed Trump into a political figure. Despite making several derogatory comments about women, immigrants, and Muslims, Trump was portrayed by some media as an agent of change. They published numerous articles about Hillary's email controversy but did not give as much coverage to the Trump tax scandal. Additionally, US media focused more on Trump than other important Republican politicians.


Conversely, some other media outlets opposed Trump. They depicted him as an abusive and manipulative person and openly campaigned against him, expressing their support for Hillary Clinton. Several public opinion polls predicted Clinton's victory. Furthermore, the media did not hesitate to label Trump as "mad." Media organizations like the New York Times, the Washington Post, and the Wall Street Journal openly opposed Trump. In response, Trump criticized the media on Twitter, claiming that they did not accurately cover his rallies. He felt that they did not show the large number of people attending his events or capture the excitement of his supporters.

During the election, both parties blamed the media, but I can confidently say that the media's impact was crucial to Trump's victory. Trump's lower approval rating in opinion polls actually increased the sympathy of the US people towards him. Media influence is present in elections worldwide, but Donald Trump's triumph in the 2016 US presidential election demonstrates that the media's impact on that particular election was the highest in history.




সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

বিংশ শতাব্দীর ভয়াবহ ১০ যুদ্ধ


যেকোনো যুদ্ধ একটি জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। যুদ্ধকালীন সহিংসতায় নিহত হয় অসংখ্য মানুষ, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি আর ব্যাহত হয় নিরাপত্তা। একটা দেশ বা জাতির জন্য যুদ্ধের থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত মানব ইতিহাসে যুদ্ধ সবসময় ই ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তারমধ্যে বিংশ শতাব্দী ছিল সবথেকে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে এই শতাব্দীতেই সংগঠিত হয়েছিল ২ টি বিশ্বযুদ্ধ ও অসংখ্য বিপ্লব।

বিংশ শতাব্দীতে ঘটা এ যুদ্ধগুলো বিশ্বজুড়ে শক্তির ভারসাম্যে প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের কারণে নতুন নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে আবার অনেক পরাশক্তির পতন ও ঘটেছে। স্বাধীন হয়েছে শত দেশ আবার সম্পূর্ণ নিভে গেছে কোনো কোনো জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন। কিন্তু সবগুলো যুদ্ধেরই একটা সাধারণ মিল ছিল, সেটা হল অগণিত মানুষের মৃত্যু। বিংশ শতাব্দীর সবথেকে ভয়াবহ ১০ টি যুদ্ধ নিয়েই আজ লিখছি।

১০)সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ(১৯৭৯-১৯৮৯)- সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিজম বিরোধী আফগান গেরিলাদের মধ্যে। তখন আফগানিস্তান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি থেকে নিরাপদ থাকতেই সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল আফগানিস্তানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র তখন আফগানিস্তানের ইসলামী প্রতিরোধ বাহিনীকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ প্রদান করে। যুদ্ধে প্রায় ১৩০০০ সেনা হারানোর পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ছেরে চলে আসে। অপরদিকে এ যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ আফগান মুজাহিদ ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিল।

০৯) কোরীয় যুদ্ধ(১৯৫০-১৯৫৩)- কোরীয় যুদ্ধ ছিল কোল্ড ওয়ারের একটি অংশ। ৩৮তম সমান্তরাল রেখা ধরে কোরিয়া উপদ্বীপকে আলাদা করা হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার সরকার হচ্ছে কমিউনিস্ট তথা সাম্যবাদী সরকার। তাদের সাথে ছিল কমিউনিস্ট চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের দারুণ সম্পর্ক। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র একটি ডানপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন ৩৮তম সমান্তরাল রেখা দুই কোরিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালের জুনে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রমন করে এবং এর মাধ্যমে কোরীয় যুদ্ধ শুরু হয়। এর একপক্ষে লড়াই করে উত্তর কোরিয়া ও চীনের সেনাবাহিনী এবং তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অপরপক্ষে লড়াই করে দক্ষিন কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। এ যুদ্ধে প্রায় ২৫ লাখ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। ১৯৫৩ এর ২৭ জুলাই দু পক্ষের মাঝে যুদ্ধবিরতি সাক্ষরিত হয়।



০৮) বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ(১৯৭১)- পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদের উপরে ঝাঁপিয়ে পরে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে। এরই মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা  যুদ্ধ। যুদ্ধে নিহত হয় ৩০ লাখের বেশি বাঙালি। মার্কিন নীলনকশা অনুযায়ী হত্যা করা হয় শত শত বুদ্ধিজীবী। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত বাঙলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল তখন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছিল পাকিস্তানকে। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আর্মি ঢাকায় আত্মসমর্পন করে এবং স্বাধীন বাঙলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়।

০৭) নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ(১৯৬৭-১৯৭০)- নাইজেরিয়ার একটি অঞ্চল বায়াফ্রা ১৯৬৭ সালের ৩০ মে নিজেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। বায়াফ্রাকে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ফ্রান্স। অপরদিকে নাইজেরিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সমর্থন পায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে নাইজেরিয়া চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বায়াফ্রাকে। এতে বায়াফ্রাতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের। ১৯৭০ সালের ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধ শেষ হয় এবং বায়াফ্রা রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়। এ যুদ্ধে ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।


০৬) দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ(১৯৯৮-২০০৩)- দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধকে হচ্ছে আফ্রিকার ইতিহাসে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ নিহত হয়। আফ্রিকার ৭ টি জাতি সরাসরি এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। খনিজ সম্পদের উপরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২০০৩ সালে কঙ্গোতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এ যুদ্ধ থেমে যায়



 ০৫) ভিয়েতনাম যুদ্ধ(১৯৫৫-১৯৭৫)- ভিয়েতনামের দুটি অংশ ছিল, উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম। উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণে ছিল কমিউনিস্টরা। অপরদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্টবিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। উত্তর ভিয়েতনাম চেয়েছিল সমগ্র ভিয়েতনামকে নিয়ে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠন করতে। কিন্তু মার্কিনিরা ভয় পেয়েছিল যদি পুরো ভিয়েতনাম কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তাহলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র সাম্যবাদ ছরিয়ে পরবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে জরিয়ে পরে। যুদ্ধে প্রায় ৩২ লাখ ভিয়েতনামি এবং ৫৮০০০ মার্কিন সেনা নিহত হয়। ভিয়েতনামে যে পরিমাণ বোমা ফেলা হয়েছিল তা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিগুন। এরপরেও কমিউনিস্টদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায়। ১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে চলে আসে।

Viet Cong

০৪) রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ(১৯১৭-১৯২২)- রাশিয়ার গৃহযুদ্ধটি বলশেভিক রেড আর্মি ও হোয়াইট আর্মির মধ্যে সংগঠিত হয়। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে থাকা রেড আর্মি ছিল সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং হোয়াইট আর্মি ছিল পুঁজিবাদ তথা সমাজতন্ত্রের বিকল্প ভাবধারার। ১৯১৭ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পরে এ যুদ্ধ শুরু হয়। রেড আর্মিকে থামাতে তখন রাশিয়ার বাইরের অনেক শক্তিও রেড আর্মির বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল এ সময়। কিন্তু ১৯২১ সাল নাগাদ রেড আর্মির কাছে হোয়াইট আর্মি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পরে। এ যুদ্ধে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ নিহত হয়।

Red Army

০৩) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ(১৯১৪-১৯১৮)- এমন একটি যুদ্ধ যাতে পতন ঘটেছে শক্তিশালী টি সাম্রাজ্যের। পাল্টে গিয়েছিল সমগ্র পৃথিবীর রাজনীতি। যুদ্ধটি শুরু হয় ১৯১৪ সালের ২৮ জুন হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যর উত্তরাধিকারি আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফারদিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। সমগ্র ইউরোপ যুদ্ধে জরিয়ে পরেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে রূপ দিয়েছিল এবং পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট স্টেট সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম হয়েছিল। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ।




০২) দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ(১৯৩৭-১৯৪৫)- যদিও চীন জাপানের মাঝে যুদ্ধ লেগেই ছিল তাও মার্কো পোলো ব্রীজ ঘটনার মাধ্যমে ১৯৩৭ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ পুরদমে শুরু হয়। সাংহাই ও নানকিং এর পতন ঘটে খুব দ্রুত। জাপানিরা নানকিং এ ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। এ যুদ্ধে ২ কোটির ও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হারের মাধ্যমে এ যুদ্ধ শেষ হয়। এ যুদ্ধে চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে ব্যাপক সাহায্য পায়। চীন-জাপান যুদ্ধ এশিয়ায় গত শতকে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ।

০১) দ্বিতীয় বিশযুদ্ধ(১৯৩৯-১৯৪৫)- মানব ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে ২য় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধের জন্য দায়ী করা হয় এডলফ হিটলারকে। প্রায় সমগ্র ইউরোপে কর্তৃত্ব স্থাপনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণ করে এ যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত করে জার্মানি। ২য় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। অপরদিকে জার্মানির সাথে ছিল জাপান ও ইটালি। এ যুদ্ধে ৬ কোটির ও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল যার অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত নাগরিক। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক বার্লিন আক্রমণ ও মিত্রবাহিনীর হাতে জার্মানির পতনের মাধ্যমে ২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয়। পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র পরমাণু বোমা হামলার ঘটনা ঘটে এ যুদ্ধে। পৃথিবীতে নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটে, শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন-যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ। মানব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।



মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে স্নায়ুযুদ্ধ


ইরান বনাম সৌদি আরব
ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্বের এক দীর্ঘকালীন ইতিহাস। ইসলামের ব্যাখ্যা, ইসলামিক জগতে নেতৃত্বের আঁকাঙ্খা, ভিন্ন তেল রপ্তানি নীতি, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী অবস্থানসহ নানা ভূ রাজনৈতিক কারণে ইরান ও সৌদি আরব পরস্পরের শত্রু হয়ে উঠেছে। যদিও ইরান ও সৌদি আরব উভয়ই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং ইসলামিক নীতি অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করে থাকে তথাপি বিশ্বাসের কিছু পার্থক্য এবং এসব ভূ রাজনৈতিক কারণে তাদের সম্পর্ক কখনই আর ভাল হয়ে উঠে নি।

সৌদি আরব একটি ডানপন্থী রক্ষণশীল সুন্নি ইসলামী রাষ্ট্র, যার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিকে রাশিয়া ও চীনের সাথে ভাল সম্পর্কের সুবাদে এন্টি-ওয়েস্টার্ন বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ইরান একটি শিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এই শিয়া সুন্নি বিভেদ নিয়েই মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার এক প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই দুদেশ, যা এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার পিছনে অন্যতম কারণ।

গত শতাব্দীর প্রথম থেকে এ দুই অঞ্চলের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। তবে শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও ইরানের সাথে ইজরাইলের সম্পর্ক থাকায় ইরান-সৌদি সম্পর্ক তেমন ভাল হয়ে উঠেনি তখনো। ১৯৬৬ সালে সৌদি আরবের কিং ফয়সাল ইরানে আসেন সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য। এরপর ইসলামের উন্নয়ন ও ইসলামিক বিভিন্ন জোট প্রতিষ্ঠায় সৌদি আরবকে সাহায্য করে ইরান।

কিন্তু ষাটের দশকের শেষদিকে ইরানের শাহ সৌদির কিং ফয়সালকে সৌদি আরবকে আধুনিকায়ন করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিং ফয়সালকে এক চিঠিতে শাহ লিখেন,"ভাই আপনি সৌদি আরবের আধুনিকায়ন করুণ। সৌদির মেয়েদের মিনিস্কার্ট পরতে দিন। ডিস্কো অনুমোদন করুণ এবং দেশকে মর্ডান করে গড়ে তুলুন। নইলে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা আপনি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।" এতে কিং ফয়সাল কঠিন ভাষায় জবাব দিয়ে বলে,"শাহ, আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই আপনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নন। আপনার দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান, দয়া করে ভুলে যাবেন না।"

১৯৬৮ থেকেই ইরানের সাথে সৌদির সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। দুদেশের মাঝে সত্তরের দশকে তেমন উত্তেজনা ছিলনা তবে ইরানের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নকে সৌদি আরব তখন থেকেই হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই ইরান একতরফাভাবে সৌদি আরবের বিরোধীতা শুরু করে। ইরান সৌদি আরবের সরকারকে ইসলামের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮৭ সালে খোমেনি প্রকাশ্যে দাবী করেন,"সৌদির ওয়াহাবিরা নৃশংস,কুৎসিত তারা মুস্লিমদেরকে পিছন থেকে আঘাত করে যাচ্ছে।" এরপর সৌদি আরবের সাথে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয় ইরানের।

আবার ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধে সৌদি আরব ইরাককে সমর্থন করে এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইরাককে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। পাশাপাশি কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাতকেও ইরাকে অর্থ পাঠানোর জন্য উতৎসাহিত করে সৌদি আরব। এর ফলে ইরান ক্ষেপে যায় এবং সৌদি আরবের আকাশসীমায় ফাইটার বিমান পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে আসে।
১৯৮৪ সালে ইরান সৌদিতে বিমান থেকে বোমাবর্ষন করে। ইরানের ৪ টি যুদ্ধবিমানের ৩ টিকে ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও ৪র্থটি সৌদির আল-দাম্মাম শহরে হামলা করতে সফল হয়।

এদিকে ১৯৮৭ সালে হজ্বের সময় ইরানী হাজ্বীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরাইলের বিপক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে সৌদির সুন্নি পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময়ে ৪০০ এর ও বেশি হাজ্বীকে হত্যা করা হয়েছিল যার মধ্যে ২৭৫ জনই ছিল ইরানী। এ ঘটনার পর সৌদি ইরান সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর সৌদি আরবের খোবার টাওয়ারে বোমা হামলা,রিয়াদের বোমা হামলা, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, নিমর আল নিমর সহ বিশিষ্ট শিয়া নেতাদের মৃত্যুদন্ড দেয়াসহ আরো অনেক ছোট খাট বিষয় নিয়ে সবসময়ই আমরা সৌদি-ইরানের সম্পর্কের তিক্ততা উপলব্ধি করতে পেরেছি। 

তবে, বর্তমানে সৌদি-ইরান শত্রুতায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার পুনঃরায় পরাশক্তি হয়ে ওঠা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমাগত প্রভাব বিস্তার করতে থাকাটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ের দেশ অপরদিকে ইরান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু রাশিয়ার বলয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শত্রু চীনের সাথেও দারুণ সম্পর্ক রয়েছে ইরানের।

সিরিয়া যুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদের সমর্থনে সবসময়ই সচেষ্ট ছিল ইরান। ২০১৫ সালে আসাদকে সহযোগিতা করতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে পরাশক্তি রাশিয়া এবং রাশিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র ইরান। অপরদিকে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে সৌদি সমর্থিত সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠি। সৌদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট আইএসকে হঠিয়ে বাশার-আল-আসাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছে ইরান। এ জন্য ইরান নিয়মিত আসাদকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য পাঠাচ্ছে।

আবার, ইরাকের বেশিরভাগ মানুষ শিয়া। ইরাকের শিয়া সরকার ও ইরানের কাছে তাই অনুগত। এটা নিয়ে সৌদি আরব উদ্বিগ্ন এবং ইরাকের সুন্নি জঙ্গি সংগঠনকে শিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতা করে যাচ্ছে ইরান।
তেল উৎপাদনের মাত্রা নিয়েও দু দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানের সাথে রাশিয়ার বোঝাপড়া ভালো। একদিকে রাশিয়া চায় তেলের দাম বেশি থাকুক অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় তেলের দাম কম থাকুক। আর এর প্রভাব এসে পরেছে এই দুই পরাশক্তির মিত্রদেশ সৌদি আরব ও ইরানেও।

ঐতিহাসিক দিক থেকে ইরানের সাথে সৌদি আরবের খারাপ সম্পর্ক বেশ পুরোনো। আরবরা আক্রমণ করে ফার্সি সভ্যতার বেশিরভাগ ধ্বংস করেছিল। সভ্যতার বিবেচনায় ইরানি সভ্যতা সবসময়ই আরব বেদুইনদের থেকে সহস্র ধাপ এগিয়ে ছিল। যার ফলে তাদের সভ্যতার উপর এরকম আঘাত ইরানিরা কখনো সহজভাবে নেয়নি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ বাদ দিয়ে আধুনিক সময়ে চোখ রাখতে গিয়েও দেখেছি নানা ভূ রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে এই দু দেশের মধ্যে লেগেই রয়েছে একেরপর এক সংঘর্ষ, রণদামামা আর সৃষ্টি হচ্ছে আঞ্চলিক অস্থিরতা। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চলমান এ সংঘাত কতদিন শুধু প্রক্সিযুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে সেটা ভাবাচ্ছে বিশ্বকে। তেলসমৃদ্ধ এ দুদেশের মাঝে চলমান কোল্ড ওয়্যার থেকে যদি ইরান-সৌদি যুদ্ধ লেগেই যায় তাহলে তার প্রভাব এরাতে পারবে না কোনো রাষ্ট্রই, ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রায় সমগ্র পৃথিবী।

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

ভারত-চীন যুদ্ধ কি আসন্ন! জিতবে কে?



চীন এবং ভারতের মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত। এই সীমান্ত বিরোধ নিয়েই ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৬২ সালে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত একমাস ধরেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে চীন-ভারত সীমান্তে। এই রণদামামা থেকে যদি ১৯৬২ সালের মত যুদ্ধ লেগেই যায় তাহলে সে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে?

চীন ভারত যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে সবার আগে দুদেশের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানা জরুরী। সামরিক ক্ষমতা দিয়েই বিচার করা হয় আসলে কার খুঁটিতে কত জোর। দেখে নেয়া যাক এ দুদেশের কার হাতে রয়েছে কীরকম অস্ত্র আর কার সেনাবাহিনী অধিক শক্তিশালী!



                             চীন                           বনাম                      ভারত 

                                                     ডিফেন্স বাজেট 
                     ২২০ বিলিয়ন ডলার 
                      ৫৫ বিলিয়ন ডলার

                                                                সেনাবাহিনী সাইজ 
                   ২৩ লাখ ৫০ হাজার প্রায়
               ১৩  লাখ ২৫ হাজার প্রায়

                                                             আণবিক বোমার সংখ্যা
                                      ২৭০ 
                                  ১২০ 

                                                          আইসিবিএম
                 DF5B : Range 15000 KM
                      Agni 5 : 8000 KM
                                                        
                                                       মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম 
                                      ১৭৭০
                                 ৩১০ 

                                                                               ট্যাঙ্ক
                                      ৯১০০
                                 ৬৪০০

                                                                     আর্মড যুদ্ধযান
                                      ৬৮০০
                                  ৪৮০০ 

                                                                     এয়ারক্র্যাফট 
                                      ৩১০০
                                  ২১০০

                                                                  এটাক হেলিকপ্টার 
                                ২১০
                                       ২০ 

                                                                           ডেস্ট্রয়ার  
                                        ২৮
                                       ১১  

                                                                                  ফ্রিগেট
                                        ৫০
                                     ১৪

                                                              সাবমেরিন 
                                        ৬৯ 
                                     ১৪ 


উপরের এই তুলনামূলক আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় চীন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু এটা শুধু পরিসংখ্যান, বাস্তব হয়ত এত সহজ হবে না। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্প্রতি বলেছেন, ১৯৬২ সালের ভারত এবং ২০১৭ সালের ভারত এক নয়। ভারত অরুনাচল রাজ্যে ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করেছে। গত একমাস যাবত সেখানে সৈন্য সংখ্যাও বাড়িয়ে চলেছে। ভারত বুঝাতে চাচ্ছে তারা প্রস্তুত।

অপরদিকে ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত লুয়ো ঝাউহুই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতকে শর্তহীনভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে চীন যে ছেরে কথা বলবে না সেটা বুঝাতে চীন ও সীমান্তে অধিক সেনা মোতায়েন করেছে, ভারতের দুটো বাঙ্কার ও উড়িয়ে দিয়েছে। হুমকি দিয়েছে সিকিমকে স্বাধীন করে দেবে আবার। উভয় পক্ষই সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে আছে।

১৯৬২ এর যুদ্ধে ভারত কত হাজার সেনা হারিয়েছিল সেটা নিয়ে ধোঁয়াসা রয়েছে। কেউ কেউ সংখ্যাটা ১০,০০০ এ টেনে নিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। সে যুদ্ধের কথা ভারতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে চীন। তাই হয়ত ভারত সেটাকে তাদের দুর্বলতা ভাবতে বারণ করে বলেছে, ২০১৭ সালে ভারত ১৯৬২ থেকে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সেই একই কথা তো চীনের ক্ষেত্রেও সত্যি! ১৯৬২ এর চীন ও তো এখনকার চীনের মত ছিল না। চীন এখন অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে। সামরিক দিকেও টেক্কা নেয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই। চীন গত কয়েক বছরে সামরিকভাবে হয়ে উঠেছে পরাশক্তি যার তুলনা হয় শুধু রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই।

চীনের সেনাবাহিনী প্রায় ২৪ লক্ষের কাছাকাছি শুধু এই জন্য চীনকে এগিয়ে রাখছি তা না। চীন তার দেশেই প্রয়োজনের ৮৫% এর ও বেশি অস্ত্র উৎপাদন করে। অন্যদিকে ভারত এখনো পুরোপুরি আমদানি করা অস্ত্রের উপরেই নির্ভরশীল। যুদ্ধ যদি ৬ মাস হয় তাও চীন যুদ্ধ করতে পারবে, যদি ১ বছর হয় তাও পারবে, যদি ২ বছর হয় তাও পারবে। কারণ অস্ত্র তারা নিজেরাই তৈরি করে। আবার চীনের অর্থনীতিও ভারত থেকে অনেক শক্তিশালী। একটা বড় পরিসরের যুদ্ধে হয়ত চীনের অর্থনীতি বাধাগ্রস্থ হবে কিন্তু ভারতের ক্ষতিটা হবে ভয়াবহ। এরপর সমরাস্ত্রের প্রতিটি দিকে ও চীন অনেক অনেক এগিয়ে আছে ভারত থেকে।

চীনের সুবিধা আছে আরো বেশ কিছু। প্রথমটা হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানের মত একটা রাষ্ট্রকে চীন সবসময় সাহায্য করেছে শুধুমাত্র ভারতকে চাপে রাখার জন্য। চীন-ভারত কোনো যুদ্ধ নতুন করে শুরু হলে পাকিস্তান বসে থাকবে না সেটা শতভাগ নিশ্চিত। চীনকে হুমকি দেয়ার আগে ভারত হয়ত এটা ভেবে দেখেনি সে কয়টা ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে পারবে? কয়টা সেনা বাঁচিয়ে ফিরতে পারবে? বীরের মত চীন বা পাকিস্তান সীমান্তে শহীদ হলে লাভ নেই, তাতে যুদ্ধ জয় হবে না। এর সাথে রয়েছে বিদ্রোহীরা। তারাও এই সুযোগে সব শক্তি দিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করবে। এক ভারতে যত বিদ্রোহ হয় দুনিয়ার আর কোনো দেশে এত বিদ্রোহ হয় বলে জানা নেই। একদিকে চীন অন্যদিকে পাকিস্তান এরপর যদি শুরু করে বিদ্রোহীরা তাহলে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে সেটা বুঝতেই পারছি আমরা।

এরকম একটা যুদ্ধ হলে ভারতের অবস্থা করুণ হয়ে যাবে। ভারতের প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকেই ভারত কোনো সমর্থন পাবে না। নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক এখন একদম তলানিতে। মায়ানমার চীনের সাথেই আছে। বাঙলাদেশ একদম নিরপেক্ষ থাকবে সেটা একটা বাচ্চাও বুঝে, আমাদের আর কোনো উপায় ও নেই।

চীন বিপ্লবের দেশ। কমিউনিস্টরা চীনের ক্ষমতায় বসে ১৯৪৯ সালে। কমিউনিস্ট চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটির কাছাকাছি। কিন্তু তারা শুধু কমিউনিস্টই নয় তারা একই সাথে চৈনিক ও। অন্যদিকে ভারতের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ১৯৬২ এর কথা ভুলে গিয়ে তারা আবার তাদের শক্তি দেখাতে চায়। কেউ যে ছার দিচ্ছে না আর ভবিষ্যতেও দিবে না সেটা নিশ্চিত। এখন এই লাগে লাগে করে যদি সত্যিই লেগে যায় তাহলে আমাদের ও ভাবতে হবে। ১৯৬২ তে এরকম আতঙ্কিত হওয়ার কারণ ছিল না। কিন্তু এখন যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করলে ভারতের বড় বড় শহরগুলো হামলার স্বীকার হবে আর এর রেশ হয়ত লাগবে বাঙলাদেশেও।
আমরা সবাই যুদ্ধের বিপক্ষে কিন্তু প্রয়োজন কিছু মানে না। এমনি এমনি চীন দক্ষিণ তিব্বতের( বর্তমানে ভারতের অরুণাচল) ৩০,০০০ বর্গমাইল এলাকার দাবী ছেরে দিবে আবার ভারত কাশ্মীর, লাদাখে বিশাল জায়গা হারিয়ে এখন আবার চীনের এই দাবী এমনি এমনিই মেনে নেবে সেরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

ইউটিউবে এ ব্যাপারে আমার ভিডিওটি দেখতে পারেন এখানে। Youtube Link

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

জার্মানি যদি ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হত!




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। কেনো এই যুদ্ধ হয়েছিল বা এর ফলাফলই বা কি হয়েছিল সেটা সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। তবে যদি ফলাফলটা একটু অন্যরকম হত অর্থাৎ সোভিয়েত-জার্মান যুদ্ধে যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন হেরে যেত তাহলে কি হত? কিংবা জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করতো তাহলেই বা কিরকম বিশ্ব পেতাম আমরা!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার খুব অল্প দিনের মাঝেই জার্মানি প্রায় সমগ্র ইউরোপ দখল করেছিল। অপর দিকে জার্মানির মিত্র জাপান ও একইভাবে সমগ্র দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় তার কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাছাড়া চীন জাপান যুদ্ধ তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই লেগেছিল, সেখানেও জাপান প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছিল ক্রমাগত। তাই দেখা গেলো এশিয়াতে জার্মানির জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশিষ্ট ছিল শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।

Comrade Stalin
প্রায় ২ কোটি ২৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন তখন কমরেড জোসেফ স্ট্যালিন। জোসেফ স্ট্যালিনের নেতৃত্বে থাকা বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করা সহজ কাজ ছিল না। তবে যুদ্ধের উন্মাদনায় মত্ত হিটলার সোভিয়েতের দিকেই পা বাড়াল। জার্মানদের এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন বারবারোসা। অতীতে রাশিয়া দখলের চেষ্টা করেছে নেপোলিয়ানসহ অনেকেই কিন্তু কেউই সফল হয়নি। সফল হয়নি হিটলার ও। হিটলারের পাঠানো প্রায় ৩৮ লক্ষ সেনাবাহিনী যুদ্ধের শুরুতে বেশ সফলতা লাভ করে। কিন্তু সোভিয়েত নাগরিকদের প্রবল দেশপ্রেম সাথে কমিউনিজমের শক্তির কাছে পরাজিত হয় জার্মানরা। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি আক্রমণ করে। এরপর সেখানে জার্মানির হারের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

এখন কথা হল, জার্মানি যদি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণই না করত তাহলে কি হত! জার্মানি খুব অল্পদিনেই ইউরোপে তার কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল। তখন অজেয় হিসেবে ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারানো ছিল অসম্ভব। তাই জার্মানি যদি সোভিয়েত আক্রমণ না করে ইউরোপ নিয়েই খুশি থাকতো তাহলে হয়ত সমগ্র ইউরোপই আজকে জার্মানদের অধীনে থাকতো। এক্ষেত্রে জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে শুধু জার্মান ভাষাতে কথা বলা বাধ্যতামূলক করা হত।


Soviet Union




কিন্তু যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির কাছে হেরে যেত?
মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের জার্মানির বিরুদ্ধে জয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোর ঘুরে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের আগে জার্মানিকে আর কেউই হারাতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে হারাতে পেরেছিল বলেই পরবর্তিতে ইউরোপ ও সমগ্র পৃথিবী জার্মানদের ধ্বংসযজ্ঞ হতে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত হারলে পুরো ইতিহাসটাই আলাদা হত।

বর্তমান পৃথিবী নিশ্চিতভাবেই একটা নরকে পরিণত হত। হিটলার ছিল একজন প্রচন্ড কমিউনিজম বিদ্বেষী।তাই মানবিক পৃথিবীর লক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যেসব কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো তা আর জন্ম হত না। জন্ম হত না কমিউনিস্ট চীনের ও। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানদের কাছে পরাজিত হলে জার্মানি ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে পুরো পৃথিবী দখল করে নিত।

Holocaust
হিটলার ইহুদীদের প্রচন্ড ঘৃণা করত। যুদ্ধকালীন সময়ে সে হত্যা করেছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী। এই গণহত্যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। জার্মানির অধীনে পৃথিবী চলে এলে হয়ত কোনো ইহুদী বেঁচে থাকতো না। ফলে ইজরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হত না। থাকতো না আইনস্টাইনসহ প্রতিভাবান ইহুদীদের নাম কোথাও। বিশ্বসেরা ইহুদীদের পণ্য গুলো থাকতো না। আমরা পেতাম না পেপসি, কোকাকোলা, আইবিএম, ইন্টেলের মত ব্র্যান্ডগুলো। পৃথিবী পিছিয়ে যেত শত বছর পিছনে। হিটলার ঘৃণা করত কালোদের ও। পৃথিবীর কালো চামরার মানুষদের ও হয়ত সে ইহুদীদের মত হত্যা করত।


Cold War
জার্মানির অধীনে থাকা বিশ্বে কোল্ড ওয়ারের সুযোগ হত না। কমিউনিজম বনাম ক্যাপিটালিজমের চলমান এই দ্বন্দ্ব হয়ত তখনই ঘুচে যেত। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে কোল্ড ওয়ার চলাকালীন যে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা চলছিল সেটা হত না। আধুনিক বিজ্ঞান পিছিয়ে যেত অনেক। কখনো হাইড্রজেন বোমা সৃষ্টি হত না। আর জাতিসংঘ জন্ম লাভের কথা চিন্তাও করা যায় না। পৃথিবীতে থাকতো না কোনো পর্নগ্রাফি। পড়াশুনার পাশাপাশি মিলিটারি ট্রেনিং নিতে হত বাধ্যতামূলকভাবে। পুরো পৃথিবীতেই হয়ত জার্মান ভাষাই চলতো তখন।

এ বিষয়ে এই ইউটিউব ভিডিওটি সবাই দেখতে পারেন-
https://www.youtube.com/watch?v=mt0NRduC9Bc



মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭

ইতিহাসের এক বর্বরতম ঘটনা একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড


ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তানিরা বুঝে গেলো তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তাই তারা তাদের বাকি থাকা সবচেয়ে ভয়াবহ কাজটা সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হ্যা, সেটাই ছিলো বাঙলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা। "বাকি থাকা কাজ" এ জন্যেই বলছি কারণ এদেশের নির্দিষ্ট কিছু বুদ্ধিজীবী হত্যা করার পরিকল্পনা পাকিস্তানিদের আগে থেকেই ছিলো। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার আগে শেষ কামড় দিয়েছিলো পাকিস্তানিরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে। 

বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক ছিলো পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এ হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিলো  তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস। কিন্তু কিভাবে এই হত্যাযজ্ঞটি শুরু হয়েছিল!! 

প্রথমে যে ব্যাপারটিতে নজর দেয়া যায় তা হলো, পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা করা বুদ্ধিজীবীদের সবাইই ছিলো সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবের জন্য সুপরিচিত। আল বদর বাহিনীর কাছে সব অধ্যাপক বা সাংবাদিকই এক ছিলো কিন্তু যারা এই বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা করেছিলো তাদের টার্গেট ছিলো সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বুদ্ধিজীবীরাই।

ব্যাপারটি নিশ্চিৎ হওয়া যায় বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক রাও ফরমান আলীর ডায়রি থেকে। সেখান থেকে জানা যায় সি আই এ এজেন্ট  হেইট ও ডুসপিকের কথা। সি আই এ বুদ্ধিজীবীদের এই তালিকা তৈরি করে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে। মুহাম্মদপুরের শারিরীক শিক্ষা কলেজটি ছিলো পাকিস্তানি ও মার্কিনী চক্রান্তকারীদের পরিকল্পনাস্থল। ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় তাদের প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয় এই শারিরীক শিক্ষা কলেজে।

বাঙলাদেশ স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এরপর এই গণহত্যার তদন্ত করতে গঠন করা হয় "গণহত্যা তদন্ত কমিটি" যার সভাপতি ছিলো জহির রায়হান, যিনি নিজেও ছিলেন একজন প্রচণ্ড সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। স্বাধীন বাঙলার প্রথম গুম হওয়া ব্যক্তি হচ্ছেন জহির রায়হান। জহির রায়হানের হত্যার জন্য তার স্ত্রী সুমিতা দেবী রফিক নামে একজনকে দায়ী করেন। কিন্তু জহির রায়হান যেদিন গুম হন তারপরেই সেই রফিক পরিবারসহ আমেরিকা চলে যায়। তাকে জহির রায়হানের গুমের ব্যাপারে যেকোনো জবাবদিহিতা থেকে আজীবন যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করেছে।

১৯৭১ সালে ঠিক কতজন বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিলো তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। সি আই এ এর তালিকায় নাম ছিলো প্রায় ৩০০০ জন বুদ্ধিজীবীর। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানিরা যদি আর এক সপ্তাহ পরে আত্মসমর্পন করতো তাহলে তারা এই তালিকার সবাইকেই হত্যা করে ফেলতো। বাংলাপিডিয়া থেকে জানতে পারি পাকিস্তানিরা মোট বুদ্ধিজীবী হত্যা করতে পেরেছিল ৯৯১ জন। যদিও বাস্তবে আরো অধিক হবে সংখ্যাটা তা বলাই বাহুল্য। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হচ্ছেন,

শহীদুল্লাহ কায়সার
নিজামুদ্দীন আহমেদ
সেলিনা পারভীন
সিরাজুদ্দীন হোসেন
আ ন ম গোলাম মুস্তফা
আলতাফ মাহমুদ
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত 
রণদাপ্রসাদ সাহা 
যোগেশ চন্দ্র ঘোষ
জহির রায়হান
নূতন চন্দ্র সিংহ
Intellectual Killing in Bangladesh 

বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগেরই লাশ পাওয়া যায় নি। যাদের লাশ পাওয়া গেছে তার প্রায় সবগুলোই ছিলো নানা বদ্ধভূমিতে। মুক্তিযুদ্ধের এ পর্যন্ত ৯৯২ টি বদ্ধভূমি পাওয়া গেছে। তবে বুদ্ধিজীবীদের লাশগুলো পাওয়া যায় মুহাম্মদপুর, মিরপুর ও রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে। হত্যার আগে তাদেরকে ভয়ানকভাবে অত্যাচার করা হয়েছিলো। যন্ত্রণা দিতে দিতে একদম শে্ষ মুহুর্তে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিলো। বেশিরভাগকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিলো কাউকে কাউকে গুলি করে মারা হয়েছিলো। তাদের লাশগুলো দেখেই অত্যাচারের নির্মমতা বুঝা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটা লাশ খুঁজে পাওয়ার কথা জানা যায় যার বর্ণনা ছিল এরকম "আর একটু এগিয়ে যেতেই বাঁ হাতের যে মাটির ঢিপিটি ছিল তারই পাদদেশে একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটির চোখ বাঁধা। পরনে কালো ঢাকাই শাড়ী ছিল। এক পায়ে মোজা ছিল। মুখ ও নাকের কোন আকৃতি নেই। কে যেন অস্ত্র দিয়ে তা কেটে খামচিয়ে তুলে নিয়েছে। মেয়েটি ফর্সা এবং স্বাস্থ্যবতী। স্তনের একটা অংশ কাটা। লাশটা চিৎহয়ে পড়ে আছে। বিভৎস চেহারার দৃশ্য বেশীক্ষণ দেখা যায়না। পরে অবশ্য সনাক্ত হয়েছে যে, মেয়েটি সাংবাদিক সেলিনা পারভীন। শিলালিপির এডিটর।



১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করেন বাঙলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। যেহেতু ১৯৭১ এর ১৪ ই ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিলো তাই ১৪ ডিসেম্বরকেই বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার রায়ের বাজারে নির্মিত হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এর স্থপতি হচ্ছেন মোস্তফা হালি কুদ্দুস। 

একটা দেশের এগিয়ে যাবার জন্য দরকার বুদ্ধিজীবীদের, তারাইতো জাতির পথপ্রদর্শক। একাত্তরের আমরা তাদের একটা বিশাল অংশ হারিয়েছি।  আজ বাঙালি এই স্মৃতিসৌধে এসে একাত্তরে সেসব বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে। এরকম হাজারো বুদ্ধিজীবী আমাদের মাঝে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করেছিলো বলেই আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করতে পেরেছিলাম। প্রফেসরদের জ্ঞানে, সাংবাদিকের লেখায় আর শিল্পীর গানে বাঙালি জাগ্রত হয়েছিলো একাত্তরে। সেইসব বুদ্ধিজীবীরা শুরু করেছিলো এক নতুন অভ্যুদয়ের, এক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই একাত্তরে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বাঙালি। কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেলি এদেশের সূর্যসন্তানদের। স্বাধীন বাঙলাদেশ তাদের ভুলে নাই। বুদ্ধিজীবী দিবসে সেইসব শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের কথা প্রবল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাঙালি।

মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭

আদিবাসীদের নিয়ে কিছু প্রলাপ


আদিবাসী কি? খায় না মাথায় দেয়? 
কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত এবং এখনও করে,যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি রয়েছে তারাই মূলত আদিবাসী। তবে আদিবাসী শব্দটার সংজ্ঞা নিয়ে বাঙলাদেশই না শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক। যারা আদিবাসীদের উপজাতি করে রাখতে চায় আসলে তারাই চায়না দেশে আদিবাসী বলে স্বীকৃত কেউ থাকুক। বাঙলাদেশের সংবিধানের দিকে তাকালে তাই এই প্রশ্নই জাগে আদিবাসী খায় না মাথায় দেয়?

 বাঙলাদেশে আদিবাসী 
বাঙলাদেশ সরকারের মতে,বাঙলাদেশে কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। তবে সরকার এর কথা আজকাল কেউ বিশ্বাস করে না তাই বলছি, বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু বুঝতেই পারছেন তাদের সাংবিধানিক কোনো স্বীকৃতি নেই।
আদিবাসী বলতে তাহলে কাদের বুঝাচ্ছি? তারা হচ্ছে, যারা এই মাটিতে সবার আগে এসেছে, চাষ করেছে এবং এই দুর্গম পাহাড়ি,শ্বাপদসংকুল পরিবেশে নিজেদের হাজার বছর টিকিয়ে রেখেছে। এইরকম জাতিদের মধ্যে রয়েছে, খিয়াং, খুমী, চাক, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা , সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, কোচ, রাজবংশী, মণিপুরি, খাসী, ত্রিপুরা, লুসাই, বরিশালের রাখাইন সহ অন্তত ৪৫ টা জাতি। তারাই এই দেশে প্রথম এসেছে, তারাই কি তাহলে আদিবাসী নয়? 


আদিবাসীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান
নির্যাতনের দিক থেকে এদেশের আদিবাসীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কোন অংশে কম ছিল না পাকিস্তান আমলে। বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে প্রচুর আদিবাসী নারী ও পুরুষ মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেয়। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে রক্ত ঝরায় প্রত্যেকটা আদিবাসীগোষ্ঠীর মানুষই।
একাত্তরে পাকিস্তান সেনা বাহিনী সাঁওতালদের হিন্দু হিসেবে গুনতো। তাই পাকিস্তানিদের অত্যাচারে বাঙলাদেশ থেকে ভারতে বিতারিত হইয়েছিল অন্তত ৩০,০০০ সাঁওতাল। তারা ভারতে গিয়ে বসে থাকেনি। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসেছে দেশে,যুদ্ধ করেছে দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঁচাতে। সেইসব সাঁওতালদের নেতা ছিলেন তখন আদিবাসী সাঁওতাল নেতা সাগরাম মাঝি। সাগররাম মাঝির অনুপ্রেরণাতেই সাওতালরা দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এই সাগরাম মাঝি। জাতীয় ৪ নেতার একজন কামরুজ্জামানের রাজনৈতিক সহকর্মীও ছিলেন তিনি।


ঐ সময়ে সাঁওতাল বিশ্বনাথ টুডু ছিলেন একজন প্লাটুন কমান্ডার। ফাদার লুকাশ মারান্ডি ছিলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক। তিনি সাঁওতালদের যুদ্ধে নানাভাবে সাহায্য করতো সেজন্য তাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করে একসময়। যুদ্ধের সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ির সাঁওতালরা ছিলো মুক্তিযুদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্যদাতা। তাই পাকিস্তানিরা গোদাদাড়িতে হামলা চালায় এবং হত্যা করে প্রচুর সাঁওতাল। ধর্ষিত হয় প্রচুর সাঁওতাল নারী।
এরকম বীরত্বপূর্ন অবদান রয়েছে আদিবাসীদের মুক্তিযুদ্ধে। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য কিছু যোদ্ধা হচ্ছেন, সাধন সিংহ, অনিতা সিনহা, বাণী সিনহা, নীলমনি চট্টোপাধ্যায়, নন্দেশ্বর সিংহ, বিজয় সিংহ, উ-মংয়াইন, উ-ক্যহ্রাচিং, উ-উসিতমং, রাজা মপ্রু, তাতিন্দ্রলাল চাকমা, রসময় চাকমা সহ অসংখ্যজন। 

 স্বাধীন বাঙলাদেশে আদিবাসীদের অবস্থা 
যে দেশে আদিবাসী বলতেই কিছু নেই সে দেশে আদিবাসীদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা সহজ না। বাঙলাদেশে আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষের মত। আদিবাসীদের একটা বিশাল অংশ পাহাড়ি। তারা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এই তিন জেলাতেই বসবাস করে বেশিরভাগ।
স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু আদিবাসী নেতাদের বলেছিলেন,আমরা সবাই বাঙালি। তোমরা তোমাদের পরিচয় ভূলে যাও এবং বাঙালি হয়ে যাও। ১৯৭৩ এ তিনি রাঙ্গামাটিতে গিয়েও বলেন, তোরা সবাই বাঙ্গালি হইয়া যা। অথচ পাকিস্তানিরাও ঠিক একইভাবে আমরা বাঙালি বলে আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার নিকৃষ্টতম ব্যাবহার করেছিল এবং আমাদের উপরে একইভাবে তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো। তাই আদিবাসীদের সাথেও ঠিক সেই কাজটাই করাটা ছিলো আমাদের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

কিন্তু ১৯৭৯ এ জিয়াউর রহমান এই পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি সেটেলার মুসলিমদের স্থানান্তরিত করে। এরপর থেকেই পাহাড়িদের জীবনে নেমে আসে আস্ত এক নরক। নিজ ভূমিতে পরবাসির মত বেঁচে আছে তারা। চরম খাদ্যের অভাব, বাঙ্গালী সেটেলারদের দ্বারা জোরপূর্বক ভূমি দখল,আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ, হত্যা, ও আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো, তাদের উচ্ছেদ করা এখন সেখানকার নিত্যনৈমত্যিক ব্যাপার।


সমতলের আদিবাসীদের ও একই হাল। এইতো কদিন আগেই সাঁওতালদের উপরে অমানবিক হামলা ও ভূমি দখলের কথা আমাদের সবার মনে আছে। 


পাহাড়ে এসব আদিবাসীবিরোধী কর্মকাণ্ডের পিছনে সবসময়ই থাকে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ। সেনাবাহিনী পাহাড়ে বাঙালি সেটলারদের নিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ থেকে ১৫ টা গণহত্যা চালিয়েছে। আর আদিবাসীদের উপর অত্যাচারতো নিত্যনৈমত্যিক ব্যাপার। পার্বত্য তিন জেলাকে মিলিটারি ক্যাম্প বানিয়ে রাখা হয়েছে। কল্পনা চাকমার সাথে যা ঘটেছিল সেটা আজ পাহাড়ের নিয়মিত ঘটনা।

কিছু পরিসংখ্যান থেকে ধারণা নেয়া যাক...... 




পরিসংখ্যানগুলো মাত্র ৭ বছর সময়কালের মধ্যে করা। আর এসবতো শুধু পরিসংখ্যানই, বাস্তব আরো ভয়াবহ।

 এর শেষ কোথায়? 
আদিবাসীদের এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী মূলত তাদেরকে আদিবাসী স্বীকৃতি না দেয়া। জাতিসংঘ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনী বলেছিলেন, বাঙলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের ফার্ষ্ট সেক্রেটারী ইকবাল আহমেদ ও বলেছেন, বাঙলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। তিনি আরো বলেন, এদেশে আদিবাসী খুঁজে যেনো জাতিসংঘ সময় নষ্ট না করে। অথচ বর্তমান হাসিনা সরকার যখন ২০০৮ এ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে তখন সেখানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়ার কথা উল্লেখ ছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর গণেশ উলটে গেলো! পরিসংখ্যান বলে কোনো সরকারের আমলেই আদিবাসীদের উপর অত্যাচার কম ছিলো না। পাকিস্তানির আমাদের সাথে যা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে যেনো তারই অনুকরণ করে চলেছে। একটা মানবিক বাঙলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ততদিন সত্যি হবে না যতদিন না এই আদিবাসীদের উপর এই অমানবিকতা বন্ধ না হয়।
সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন। কথা হচ্ছে তাহলে সাগরাম মাঝিরা যুদ্ধ করেছিলো কি জন্য? তার থেকে বড় কথা এই ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী কি বাঙালি? তারা যদি চাকমা , মারমা বা গারো হয় তাহলে তারা কি বাঙলাদেশের নাগরিক না? আমরা কজন চাকমাদেরকে বাঙালি মনে করি? দেশটাকি তাহলে শুধু বাঙালিরই হলো! বাঙলাদেশ কি  এসব আদিবাসীগোষ্ঠীর না! আর আদিবাসী নির্যাতন বন্ধে আইন কি হবে না! সেনাবাহিনী কি আইনের ঊর্ধ্বে? আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে আমরা কবে সচেতন হব? তারা এভাবেই নির্যাতিত হয়ে যাবে আজীবন!