ভারত-চীন যুদ্ধ কি আসন্ন! জিতবে কে?
চীন এবং ভারতের মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত। এই সীমান্ত বিরোধ নিয়েই ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৬২ সালে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত একমাস ধরেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে চীন-ভারত সীমান্তে। এই রণদামামা থেকে যদি ১৯৬২ সালের মত যুদ্ধ লেগেই যায় তাহলে সে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে?
চীন ভারত যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে সবার আগে দুদেশের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানা জরুরী। সামরিক ক্ষমতা দিয়েই বিচার করা হয় আসলে কার খুঁটিতে কত জোর। দেখে নেয়া যাক এ দুদেশের কার হাতে রয়েছে কীরকম অস্ত্র আর কার সেনাবাহিনী অধিক শক্তিশালী!
চীন বনাম ভারত
সাবমেরিন
ডিফেন্স বাজেট
২২০ বিলিয়ন ডলার
|
৫৫ বিলিয়ন ডলার
|
সেনাবাহিনী সাইজ
২৩ লাখ ৫০ হাজার প্রায়
|
১৩ লাখ ২৫ হাজার প্রায়
|
আণবিক বোমার সংখ্যা
২৭০
|
১২০
|
আইসিবিএম
DF5B : Range 15000 KM
|
Agni 5 : 8000 KM
|
মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম
১৭৭০
|
৩১০
|
ট্যাঙ্ক
৯১০০
|
৬৪০০
|
আর্মড যুদ্ধযান
৬৮০০
|
৪৮০০
|
এয়ারক্র্যাফট
৩১০০
|
২১০০
|
এটাক হেলিকপ্টার
২১০ |
২০
|
ডেস্ট্রয়ার
২৮
|
১১
|
ফ্রিগেট
৫০
|
১৪
|
৬৯
|
১৪
|
উপরের এই তুলনামূলক আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় চীন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু এটা শুধু পরিসংখ্যান, বাস্তব হয়ত এত সহজ হবে না। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্প্রতি বলেছেন, ১৯৬২ সালের ভারত এবং ২০১৭ সালের ভারত এক নয়। ভারত অরুনাচল রাজ্যে ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করেছে। গত একমাস যাবত সেখানে সৈন্য সংখ্যাও বাড়িয়ে চলেছে। ভারত বুঝাতে চাচ্ছে তারা প্রস্তুত।
অপরদিকে ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত লুয়ো ঝাউহুই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতকে শর্তহীনভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে চীন যে ছেরে কথা বলবে না সেটা বুঝাতে চীন ও সীমান্তে অধিক সেনা মোতায়েন করেছে, ভারতের দুটো বাঙ্কার ও উড়িয়ে দিয়েছে। হুমকি দিয়েছে সিকিমকে স্বাধীন করে দেবে আবার। উভয় পক্ষই সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে আছে।
১৯৬২ এর যুদ্ধে ভারত কত হাজার সেনা হারিয়েছিল সেটা নিয়ে ধোঁয়াসা রয়েছে। কেউ কেউ সংখ্যাটা ১০,০০০ এ টেনে নিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। সে যুদ্ধের কথা ভারতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে চীন। তাই হয়ত ভারত সেটাকে তাদের দুর্বলতা ভাবতে বারণ করে বলেছে, ২০১৭ সালে ভারত ১৯৬২ থেকে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সেই একই কথা তো চীনের ক্ষেত্রেও সত্যি! ১৯৬২ এর চীন ও তো এখনকার চীনের মত ছিল না। চীন এখন অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে। সামরিক দিকেও টেক্কা নেয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই। চীন গত কয়েক বছরে সামরিকভাবে হয়ে উঠেছে পরাশক্তি যার তুলনা হয় শুধু রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই।
চীনের সেনাবাহিনী প্রায় ২৪ লক্ষের কাছাকাছি শুধু এই জন্য চীনকে এগিয়ে রাখছি তা না। চীন তার দেশেই প্রয়োজনের ৮৫% এর ও বেশি অস্ত্র উৎপাদন করে। অন্যদিকে ভারত এখনো পুরোপুরি আমদানি করা অস্ত্রের উপরেই নির্ভরশীল। যুদ্ধ যদি ৬ মাস হয় তাও চীন যুদ্ধ করতে পারবে, যদি ১ বছর হয় তাও পারবে, যদি ২ বছর হয় তাও পারবে। কারণ অস্ত্র তারা নিজেরাই তৈরি করে। আবার চীনের অর্থনীতিও ভারত থেকে অনেক শক্তিশালী। একটা বড় পরিসরের যুদ্ধে হয়ত চীনের অর্থনীতি বাধাগ্রস্থ হবে কিন্তু ভারতের ক্ষতিটা হবে ভয়াবহ। এরপর সমরাস্ত্রের প্রতিটি দিকে ও চীন অনেক অনেক এগিয়ে আছে ভারত থেকে।
চীনের সুবিধা আছে আরো বেশ কিছু। প্রথমটা হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানের মত একটা রাষ্ট্রকে চীন সবসময় সাহায্য করেছে শুধুমাত্র ভারতকে চাপে রাখার জন্য। চীন-ভারত কোনো যুদ্ধ নতুন করে শুরু হলে পাকিস্তান বসে থাকবে না সেটা শতভাগ নিশ্চিত। চীনকে হুমকি দেয়ার আগে ভারত হয়ত এটা ভেবে দেখেনি সে কয়টা ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে পারবে? কয়টা সেনা বাঁচিয়ে ফিরতে পারবে? বীরের মত চীন বা পাকিস্তান সীমান্তে শহীদ হলে লাভ নেই, তাতে যুদ্ধ জয় হবে না। এর সাথে রয়েছে বিদ্রোহীরা। তারাও এই সুযোগে সব শক্তি দিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করবে। এক ভারতে যত বিদ্রোহ হয় দুনিয়ার আর কোনো দেশে এত বিদ্রোহ হয় বলে জানা নেই। একদিকে চীন অন্যদিকে পাকিস্তান এরপর যদি শুরু করে বিদ্রোহীরা তাহলে যুদ্ধের ফলাফল কি হবে সেটা বুঝতেই পারছি আমরা।
এরকম একটা যুদ্ধ হলে ভারতের অবস্থা করুণ হয়ে যাবে। ভারতের প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকেই ভারত কোনো সমর্থন পাবে না। নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক এখন একদম তলানিতে। মায়ানমার চীনের সাথেই আছে। বাঙলাদেশ একদম নিরপেক্ষ থাকবে সেটা একটা বাচ্চাও বুঝে, আমাদের আর কোনো উপায় ও নেই।
চীন বিপ্লবের দেশ। কমিউনিস্টরা চীনের ক্ষমতায় বসে ১৯৪৯ সালে। কমিউনিস্ট চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটির কাছাকাছি। কিন্তু তারা শুধু কমিউনিস্টই নয় তারা একই সাথে চৈনিক ও। অন্যদিকে ভারতের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ১৯৬২ এর কথা ভুলে গিয়ে তারা আবার তাদের শক্তি দেখাতে চায়। কেউ যে ছার দিচ্ছে না আর ভবিষ্যতেও দিবে না সেটা নিশ্চিত। এখন এই লাগে লাগে করে যদি সত্যিই লেগে যায় তাহলে আমাদের ও ভাবতে হবে। ১৯৬২ তে এরকম আতঙ্কিত হওয়ার কারণ ছিল না। কিন্তু এখন যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করলে ভারতের বড় বড় শহরগুলো হামলার স্বীকার হবে আর এর রেশ হয়ত লাগবে বাঙলাদেশেও।
আমরা সবাই যুদ্ধের বিপক্ষে কিন্তু প্রয়োজন কিছু মানে না। এমনি এমনি চীন দক্ষিণ তিব্বতের( বর্তমানে ভারতের অরুণাচল) ৩০,০০০ বর্গমাইল এলাকার দাবী ছেরে দিবে আবার ভারত কাশ্মীর, লাদাখে বিশাল জায়গা হারিয়ে এখন আবার চীনের এই দাবী এমনি এমনিই মেনে নেবে সেরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
ইউটিউবে এ ব্যাপারে আমার ভিডিওটি দেখতে পারেন এখানে। Youtube Link
ইউটিউবে এ ব্যাপারে আমার ভিডিওটি দেখতে পারেন এখানে। Youtube Link